IMG-20211008-WA0003

রোমাঞ্চকর ট্রেইল তুয়ারী মারাইং

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিমঃ গন্তব্য তুয়ারী মারাইং। সঙ্গী অদম্য দামালের দল দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ। খাগড়াছড়িগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরেই পৌঁছি। হেটেলে উঠে সাফসুতর হতে হতেই দীঘিনালা পথের বাহন মাহেন্দ্র প্রস্তুত। গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতে ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দানাপানি ঢুকিয়ে নিই। সারাদিন কি পাব আর খাবো। তাই গরম গরম ভাত, ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচ ঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয় মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্র ঢুকে যায় ইট সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতর বেশ ভাললাগা কাজ করতে থাকে। চারপাশ সুনসান নিরবতা ভর করা অরণ্য ঘেরা সরু পথ। আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম বিদ্যা নিকেতন ছাড়িয়ে সীমানা পাড়ায় পৌঁছে গাড়ি ব্রেক। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে ট্র্যাকিং। মাথার উপর নীল আসমান জুড়ে শরৎ কালের শুভ্রতায় ছুটে চলছি। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যাকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘন্টাখানেক হাইকিং-ট্র্যাকিং করার পর, এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়। এবার চিকন চিকন বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি - দেখতেই হবে। তাই লতা গুল্মের সাহায্যে নেমে যাই। 

 নামলামতো ঠিকই। কিন্তু এর পরের দৃশ্য আরো ভয়ঙ্কর। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড়শ ফিট উপর হতে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঝুম বর্ষায় এটাও হয়তো একটা ঝর্ণার রুপ ধারণ করে থাকে। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০/১২ ফিট নীচে নামতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলেই সাইজ। কি আর করা। দুর্বার দে-ছুট বলে কথা। সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। সেইরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বুঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। প্রকৃতি যেমনি মায়াবি, ঠিক তেমনি আবার চরম প্রতিশোধ পরায়ন। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি। তুয়ারী মারাইং ঝর্ণার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিলো না। যতটুকুনই ছিলো শুধু পাথর আর পাথর। দুপাশে খাড়া উঁচু পাহাড়। ওর মাঝ দিয়েই চলছিলো আমাদের হাইকিং। প্রাচিণ গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়েছিলো, যে কেউ প্রথম দেখায় ভুতুরে বাড়ির প্রান্তর মনে করে থাকবে। ভ্রমণান্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই। যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝর্ণার দেখা মিলে। 


সুবহানাল্লাহ। তুয়ারী মারাইং ঝর্ণার রূপ দেখবো নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখবো। কোনটা রেখে কোনটায় দৃষ্টি আটকাবো। পুরাই অস্থির প্রকৃতি। প্রায় শতফিট উচ্চতা থেকে ঝর্ণার পানিয় ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মন মাতানো অনবরত ছন্দতোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝর্ণার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরী হয়েছে। যেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝর্ণার ডান সাইডের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেনো বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এই কারণেই ঝর্ণার নামটা তুয়ারী মারাইং। তুয়ারী অর্থ কুয়া/কূপ আর মারাইং অর্থ থালা/বাসন। অর্থাৎ কুয়ার থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝর্ণা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগলিক আকৃতি সহ এর যাবার ট্রেইলটা অসাধারণ সৌন্দর্য বহন করে আছে। যে কোন ভ্রমণ পিপাসু তুয়ারী মারাইং দেখতে গিয়ে, আমৃত্যু সুন্দর স্মৃতির ঝুলি নিয়ে ফিরতে পারবে।  

যাবেন কী ভাবে? ঢাকা-খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে থাকে। খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড হতে চান্দের গাড়ি/মাহেন্দ্র/সিএনজিতে দীঘিনালা নয় মাইল এলাকার সীমানা পাড়া। মাইতুই বা সীমানা পাড়া হতে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়। 

থাকবেন ও খাবেন কোথায়? খাগড়াছড়ি শহরে মানভেদে বিভিন্ন আবাসিক ও খাবার হোটেল রয়েছে। চাইলে তুয়ারী মারাইং দিনে দিনে দেখে, রাতের গাড়িতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। 

সতর্কতাঃ অ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল করার উপযোগি রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানি সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিবেন।

টিপসঃ শীত মৌসুমেও তুয়ারী মারাইং ট্রেইল ভ্রমণ হবে অনন্য।

কৃতজ্ঞতাঃ মিলন ত্রিপুরা

ছবির ছৈয়ালঃ দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/


Comment As:

Comment (0)