এ্যাক্টিভ ফাইন

অ্যাক্টিভ ফাইনের আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ; চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে অসহযোগিতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের (এএফসি) আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। কিন্তু বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, পুনরায় বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য অ্যাক্টিভ ফাইনকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তবুও বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিএসইসির নির্দেশনা মানছে না কোম্পানিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, সোমবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে সহায়তা করেনি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ফলে, বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হবে না বলে মনে করে এই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণীর ওপর একটি বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৪ এর সাব-রুল ৩ এর ক্ষমতাবলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গত ১ নভেম্বর কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বিএসইসির জারি করা চিঠি অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে সহযোগিতা করেনি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৯ ডিসেম্বর কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নিরীক্ষককে সহযোগিতা না করার কারণ জানতে চায় বিএসইসি। ওই চিঠির জবাবে গত ৫ ডিসেম্বর দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে, বিএসইসি মনে করে, নিরীক্ষা কার্যক্রমে কোম্পানিটির সহযোগিতা না করার ব্যাখ্যা যথাযথ ও গ্রহণযোগ্য নয়।

এ পরিস্থিতিতে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হলো। এ কাজের ব্যর্থতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর বিধানের অধীনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির ৭৯০তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ৮ লাখ টাকায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমে নয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের কোম্পানি সচিব মো. মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষার কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করায় বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি জানান, এ বিষয়ে আমরা বিএসইসিতে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কারণ, বিশেষ নিরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোম্পানিতে অতিরিক্ত লোকবলের প্রয়োজন। আমরা লোকবল নিয়োগের চেষ্ঠা চালাচ্ছি। আশা করছি শিগগীরই এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ৩ বছরের আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষও। এজন্য ওই কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ৩০ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ১২.০৪ শতাংশ শেয়ার আছে পরিচালকদের হাতে। ফলে, এখনও ১৭.৯৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে কোম্পানিকে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোম্পানিকে একাধিকবার শুনানিতে তলব করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদসহ কোম্পানির সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) তলব করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘বি ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫.৯৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৮.৯০ শতাংশ শেয়ার আছে। সোমবার (১০ জানুয়ারি) অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৯.৫০ টাকায়।

বিনিয়োগবার্তা/এমআর/এসএএম//

 


Comment As:

Comment (0)