মিহির স্যার

চিকিৎসা গবেষণা-গবেষক ও মানব কল্যাণ

ড: মিহির কুমার রায়: বিগত ৯ই জানুয়ারী রবিবার দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট হার্ট, কিডনি ও ক্যান্সার চিকিৎসার সমন্বিত ইউনিট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিশেষভাবে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের  চিকিৎসকদের রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণায় সময় দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা অনিবার্য হওয়ায় চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি গবেষণা পরিচালনার জন্য দেশে ৮টি বিভাগে ৮টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে  যেখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও চিৎিসকগন নজর দেবে। চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে ভাল গবেষণা করে যাচ্ছেন তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা ভাল ও নামী-দামী চিকিৎসক হয়ে যান তারা তো চিকিৎসা সেবা দিতেই ব্যস্ত থাকেন, তারা যদি এই গবেষণায় মনোনিবেশ করেন বিশেষত: দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায় পরিবর্তনে মানুষের কি কি ধরনের রোগ দেখা দেয়, এর প্রতিরোধ শক্তিটা কিভাবে বাড়ানো যায় তা হলে দেশ অনেক উপকৃত হবে। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে এটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের জনসংখ্যার কথা চিন্তা করেই এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। সরকারের সাভারে বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বায়োকেমিক্যাল, বায়োমেডিক্যাল, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অনকোলজি এসব বিষয়ে গবেষণার খুবই প্রয়োজন।  

বাংলাদেশ চায় প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে দেশের জনশক্তি গড়ে উঠুক এবং এর জন্য অতিমারীকে (করোনা) যেভাবে হোক মোকাবেলা করতে হবে এবং এজন্য মানুষের মঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যেন জাতির পিতার আকাঙ্খা অনুযায়ী একবারে তৃণমূলের মানুষটি পর্যন্ত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হার্ট, কিডনি, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-তে উল্লেখ ছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সে প্রতিশ্রুতি পালন করছে। পাশাপাশি তার সরকার স্বাস্থ্যনীতি ২০১১, জনসংখ্যা নীতি ২০১২, জাতীয় পুষ্টি নীতি ২০১৫ এবং জাতীয় ঔষধ নীতি ২০১৬ প্রণয়ন করেছে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পাশাপাশি ১৩ বছরে ১২টি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন এবং ১১টি বিশেষায়িত হাসপাতালকে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল কর্মীসহ এখাতে জনবল নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে (ডিএমসিএইচ) ৫ হাজার শয্যার অত্যাধুনিক স্পেশালাইজড হাসপাতালে রূপান্তর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে। তাছাড়া, ১ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উর্ধে সকল নাগরিককে বিন্যামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরিকল্পনাও তার সরকারের রয়েছে।

এখন হঠাৎ করে কেনইবা সরকারপ্রধান গবেষনার প্রতি এত মনোনিবেশ করলেন? তার একটা বড় কারন কভিড-১৯ অতিমারীর কারণে স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আরো প্রকট হয়েছে যা মোকাবেলা করার জন্য গবেষনার কোন বিকল্প নেই। এতে টিকা আবিস্কারের বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং সরকার টাকা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে টিকা ক্রয় করছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষায় বিশ্বে বিনামূল্যে টিকা প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বর্তমান ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু অগ্রাধিকারের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি অন্যতম। সরকার দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করবে, এজন্য যত টাকাই লাগুক সরকার তা ব্যয় করবে। সে লক্ষ্যে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দের বাইরে টিকা কিনতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন সাপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে। টিকা সংগ্রহে চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।  বিশ্বব্যাংক থেকে কোভিড-ভ্যাকসিন কিনতে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য ১৪.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হচ্ছে। টিকা কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার লক্ষ্যে ঋণচুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং এআইআইবি হতে ভ্যাকসিন কেনার জন্য সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।

সরকার মনে করছে বাংলাদেশ যদি টিকা গবেষনা ও উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে তা হলে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং দেশের গবেষক/গবেষনা প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশে চিকিৎসা গবেষনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বি,এম,আর,সি), জাতীয় জনসংখ্যা গবেষনা ও প্রশিক্ষন ইনষ্ঠিটিউট (নিপোর্ট), স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনষ্টিটিউট, আই.সি,ডি,ডি,আর,বি ও রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা ইনষ্টিটিউট ইত্যাদি। তাছাড়াও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাইন্স অনুষদের মাইক্রো বায়োলজি/ভাইরোলজি বিভাগ এই বিষয়ে গবেষনা করে থাকে। এরি মধ্যে সাভার গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকগন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ ফাউন্ডেশন সহ ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের গবেষকগন কাজের কথা জানিয়েছে। তার পরও গষেনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষনায় আগ্রহী হচ্ছে না যা ব্যয়ের চিত্র থেকে প্রতিয়মান হয় যেমন:

এক: ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭.২ শতাংশ। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্য গবেষণায় বরাদ্দ ছিল অথচ খরচ হয়নি বরাদ্দের এক টাকাও বিধায় এ খাতে অর্থ বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ মনিটরিং প্রয়োজন। কভিড-১৯ ও অন্যান্য রোগ বিষয়ে গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ ও তার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ও মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে, সেক্ষেত্রে এ বিভাগের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল অসংক্রামক রোগের বিস্তৃতি ও চিকিৎসায় ব্যক্তিগত ব্যয়ের উচ্চহারের কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন চিকিৎসক/কর্মী নিয়োগ, করোনা মোকাবেলার জন্য কিট, পিপিই:, মাস্ক, অক্সিজেন ও মেডিসিন সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্ব আরও বেশী হওয়ার প্রয়োজন ছিল; তার সাথে ব্যাপক ভাবে আত্বসামাজিক গবেষনার প্রয়োজন।

দুই: গতানুগতিক ভাবেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় কম যা গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ গড়ে জিডিপির শতকরা মাত্র ২ ভাগ বা তারও কম আর বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যয় করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। উন্নত দেশগুলোতে এই হার শতকরা ১০ থেকে প্রায় ২০ ভাগ। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয়ের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে। দক্ষিণ এছাড়া মহামারির সময় জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বাজেটে এবারও ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে করোনা টিকা কিনতে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য ১৪ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে, যা ইতোমধ্যে ব্যবহার হচ্ছে।

তিন: সাম্প্রতিক তথ্য বলছে সারা পৃথিবীতে করোনা সংক্রামনের সংখ্যা ৩২ কোটি ১২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৯ এবং মৃত্যু বরন করেছে ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ২৮ জন। অপরদিকে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ লাখের কিছু বেশি এবং মৃত্যু বরন করেছে ২৮ হাজারের কিছু বেশী। এমতাবস্থায় ওমিক্রন নামে একটি ভাইরাস এসেছে এবং  অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, ওমিক্রনের অস্বাভাবিক পরিব্যাপ্তি বা মিউটেশনের কারণে করোনার অন্যান্য প্রকরণের তুলনায় ওমিক্রন ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, যার ভয়াবহতা অনেকে অ্যাপোক্যালিপ্স বা মহাপ্রলয়ের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। ওমিক্রন প্রকরণটির ‘আরএনএ’ জিনোমে পঞ্চাশটিরও অধিক বংশানুগত পরিব্যাপ্তি ঘটেছে, যার মধ্যে কয়েকটি বেশ উদ্বেগপূর্ণ। এমতাবস্থায় স্বাস্ত্য ঝুকি ক্রমেই বেড়ে চলছে এবং এর নিরাময়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষনায় চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে।

চার: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অতি সম্প্রতি করোনার নতুন দুই চিকিৎসা পদ্ধতির অনুমোদন দিয়েছে। এ ভাইরাসজনিত গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু প্রতিরোধ করতে অন্যান্য টিকার পাশাপাশি নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের হাসপাতালে যাওয়ার হার বাড়ছে। ডব্লিউএইচও আশঙ্কা করছে, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ইউরোপের অর্ধেক মানুষ করোনা সংক্রমিত হবে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (বিএমজে) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের কর্টিকসটারয়েডস নামে একটি ওষুধের সঙ্গে আর্থ্রাইটিসের ওষুধ বারিসিটিনিব প্রয়োগ করলে ভেন্টিলেশনে নেয়ার ঝুঁকি কমে যায়। মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে। যারা বয়স্ক, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম কিংবা ডায়াবেটিসের মতো কোন রোগে ভুগছেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা সিনথেটিক এ্যান্টিবডি চিকিৎসা পদ্ধতি সট্রোভিম্যাবের সুপারিশ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওমিক্রনের মতো করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে এটি কতটা কার্যকর, তা এখনও অনিশ্চিত। করোনার আরও তিনটি চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে করোনা সংক্রমিত গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় কর্টিকসটারয়েডসের প্রয়োগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়। কর্টিকসটারয়েডের দাম কম। গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে এটি দ্রুত কার্যকর। গত বছরের জুলাইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায় আর্থ্রাইটিসের আরও দুটি ওষুধ টসিলিজুম্যাব ও সারিলুম্যাব। এই সকল পরিস্থিতির  কারনে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রায়োগিক গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে।

পাঁচ: বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। যারা বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ২১ বছরের কিছু সময় বেশি। দেশের প্রায় ১৫টি বছর সামরিক জান্তাদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের ধারাবাহিক ১৩টি বছর শাসনকাল ছিল স্বর্ণযুগ যার ফলে স্বাস্থ্যসেবায় যে অগ্রগতি তা সরকারের কৃতিত্ব এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমান বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। বর্তমান সরকারের (২০০৯-২০১০) থেকে (২০১৯-২০২১ সময়ের দৃশ্যত যে সাফল্যগুলো রয়েছে, তার মধ্যে বাজেট বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ৯৪.৮ থেকে ৯৮ শতাংশ, শিশু মৃত্যুর হার ৩.৯ থেকে কমে ২.৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩,২৬৮ মেগাওয়াট থেকে ১৮,৩৫৩ মেগাওয়াট, গ্যাস উৎপাদন ১,৭৪৪ মি. ঘনফুট থেকে ২,৭৫০ মি. ঘনফুট, গড় আয়ু ৬৯.৯ বছর থেকে ৭২.৫ বছর, দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০ শতাংশ, বৈদেশিক রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪৮.২ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ৭৫৬ ডলার থেকে বেড়ে ২৫৫৬ ডলার, আমদানি বাণিজ্য ২২.৫ ডলার থেকে বেড়ে ৫৬ বিলিয়ন ডলার, রফতানি আয় ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪২.৮ বিলিয়ন ডলার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৫ থেকে ৭.২ শতাংশ উন্নীত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ তেমন বাড়েনি। অথচ গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ সরকারের অর্জন দৃশ্যত: অনেক। যেমন, মানবসম্পদ উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা, যা সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ১৩ হাজার ১২৬টি, যারা গ্রামীণ ৩৪টি ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করে থাকে। এখন যে কাজগুলো জরুরীভিত্তিতে করা প্রয়োজন তা হলো, গ্রাম-শহরের মধ্যে চিকিৎসা সেবার বৈষম্য কমিয়ে সমানুপাতিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের ২২ শতাংশ ব্যয় হয় মেডিক্যাল শিক্ষায়। অথচ আধুনিক শিক্ষা উপকরণ, গবেষণা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে তেমন কোন বরাদ্দ নেই, যা অবশ্যই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে চিকিৎসা গবেষনাকে এগিয়ে নিতে হবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান এই সকল চিকিৎসকদের সাধনার বিনিময়ে।

লেখক: গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)