rangpur

রংপুরে বোরো আবাদে বাড়তি খরচ ৬৫ কোটি টাকা

রংপুর প্রতিনিধি: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ নিয়ে চিন্তিত। ডিজেলনির্ভর সেচ দিতে এবার বাড়তি খরচ গুনতে হবে তাদের। আর এতে ধান উৎপাদন পরবর্তী ন্যায্যমূল্য নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকা বাড়ানোর কারণে প্রতি একর (১০০ শতাংশ) জমিতে বাড়তি খরচ পড়বে ৩০০ টাকার ওপরে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে (২৪৭ শতাংশ জমি) বাড়তি খরচ আড়াই হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকদের দাবি, গত মৌসুমে বোরো ধানের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ছিল ২৭ টাকা। এবার প্রতি কেজিতে ৩ টাকা বেশি খরচ পড়বে। এর নেপথ্যে সেচের মূল উপাদান জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, বন্যা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেই হিসেবে এবার বোরো মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে সেচনির্ভর ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ডিজেল দিয়ে সেচ দিতে ৬৫ কোটি টকার ওপরে বাড়তি খরচ গুনতে হবে।

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে অনেকেই বোরো ধান লাগিয়েছেন। অনেকই বীজতলা পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ বাড়তি খরচের চিন্তা মাথায় নিয়েই চারা রোপণ শুরু করছেন। তবে কৃষকের ক্ষতমনে এবার ডিজেলের দাম বৃদ্ধির যেমন প্রভাব পড়েছে। তেমনি শীতের দাপুটে আচরণে বোরোর বীজতলা নিয়েও বেড়েছে চিন্তা। বৈরী আবহওয়া আর ঘন কুশায়ার কারণে শীতজনিত রোগে পচন ধরেছে বীজতলায়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টরে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ, ডিজেল ও এনএনপি, সোলারচালিত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার সেচচালিত যন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। এবারও সেই লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সেই হিসেবে গভীর নলকূপ বিদ্যুৎচালিত ২ হাজার ৭৭০টি দিয়ে ৬৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর, ডিজেলচালিত ২৩টি গভীর নলকূপ দিয়ে ২৯৫ হেক্টর, এনএনপি বিদ্যুৎচালিত ৪২টিতে ২৯১ হেক্টর, ডিজেল ৫২৬টি দিয়ে ৭৪৯ হেক্টর, সোলারচালিত ২৫টিতে ৪৯ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

অপরদিকে, বিদ্যুৎচালিত অগভীর ৭১ হাজার ২৫৪টি নলকূপ দিয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর, অগভীর ডিজেলচালিত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৯টি সেচযন্ত্র দিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হবে। অগভীর ৯৯টি সোলারে ৮০৯ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এই অঞ্চলে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে অগভীর ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া হবে। ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়াতে কৃষকদের একরপ্রতি বাড়তি খরচ পড়বে ৩০০ টাকার ওপরে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে বাড়তি খরচ দাঁড়াবে আড়াই হাজার টাকার ওপরে। সব মিলিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ডিজেলনির্ভর সেচে বাড়তি খরচ পড়বে ৬৫ কোটি টকার ওপরে।

এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের সেচনির্ভর আবাদ কমিয়ে অন্যান্য ফসলের আবাদ বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে  ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেক কৃষক।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মাহবুবার রহমান বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয়—এমন ফসল আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বোরো মৌসুমে যেসব জমিতে সেচের জন্য ফিতা-পাইপসহ বিভিন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়, সেগুলো নষ্ট না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে আরেক মৌসুমে সম্পূরক সেচ দিতে খরচ কম লাগে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে ধানের বীজতলার ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা কম রয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকা অতিরিক্ত উপপরিচালক (এলআর) কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। বোরো ধানের পরিবর্তে কৃষকদের আউশ ধান চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএল//


Comment As:

Comment (0)