nbr

‘চট্টগ্রাম নগরীর ভেতরে বেসরকারি আইসিডি স্থাপন নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর ভেতরে আর কোনো বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিডি) স্থাপন করা যাবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন এক নীতিমালায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

গত বুধবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত আইসিডি বন্দর এলাকা থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হতে হবে।

নতুন এই নীতিমালা হওয়ায় এখন থেকে আর নগরীর ভেতরে জনবহুল এলাকায় বেসরকারি আইসিডি করা যাবে না। ফলে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ভারী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি কমবে যানজট। বন্দর ব্যবহারকারীরা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। তারা এটিকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে বন্দরের ২০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে স্থাপিত পুরোনো আইসিডিগুলোর বিষয়ে নীতিমালায় স্পষ্টভাবে কিছু বলা না হলেও পর্যায়ক্রমে এগুলো সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে বেসরকারি খাতে আইসিডি স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি গড়ে উঠেছে, যার বেশিরভাগেরই অবস্থান বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে। আইসিডিগুলোতে আমদানি, রপ্তানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। রপ্তানি পণ্যের প্রায় শতভাগ এবং আমদানি পণ্যের ২৫ শতাংশ আইসিডিগুলোর মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়।

১৯টি বেসরকারি আইসিডির সম্মিলিত কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সমান)। রপ্তানি পণ্য ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানযোগে এনে আইসিডিতে কনটেইনার বোঝাই করা হয়। আগে কাজটি বন্দরের ভেতরে করা হতো। এতে বন্দরের ভেতরে প্রায়ই লেগে থাকত কনটেইনার জট। আইসিডিতে পণ্য বোঝাইয়ের পর ট্রেইলারে তুলে কনটেইনারগুলো বন্দরে নিয়ে জাহাজীকরণ করা হয়।

একইভাবে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে এনে রাখা হয় আইসিডিতে। পরে সুবিধাজনক সময়ে আমদানিকারকরা এগুলো ডেলিভারি (সরবরাহ) নেন।

আইসিডিগুলোর বেশিরভাগই বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে অর্থাৎ নগরীর জনবহুল এলাকায় হওয়ায় প্রতিদিন শত শত ভারী যানবাহন অভ্যন্তরীন সড়কগুলো ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেওয়া করতে থাকে। এতে অতিরিক্ত চাপের কারণে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

এছাড়া আইসিডির আশপাশের সড়কগুলোতে প্রায় সারাদিনই লেগে থাকে যানজট। তাই আইসিডিগুলো বন্দরের ২০ কিলোমিটারের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি তোলে চসিকসহ বিভিন্ন পক্ষ। এ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির একাধিক বৈঠকে আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা মিলছিল না। অবশেষে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এনবিআর।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আইসিডি করতে হলের বন্দর এলাকার ২০ কিলোমিটারের বাইরে যেতে হবে।’

তিনি জানান, পুরোনো আইসিডিগুলোর বিষয়ে সরকারের নীতি হচ্ছে এগুলোকে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিতে হবে। তবে এ কাজ রাতারাতি সম্ভব নয়। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে একেকটা স্থাপনা বানানো হয়েছে। তাদেরকে তো কিছুটা সময় দিতে হবে। একটা স্থাপনা বাইরে সরিয়ে নিতে হলে জমি লাগবে। তারপর সেখানে আইসিডি স্থাপন করতে হবে। এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আইসিডি মালিকদের জানানো হয়েছে। তাদেরকেও হয়তো পর্যায়ক্রমে স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে।

এদিকে নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এটা খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। শহরের মধ্যে আইসিডি হলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পণ্য ওঠানো নামানো কঠিন হয়ে পড়ে। যানজটে নাগরিকদের চলাচলেও সমস্যা হয়। আশা করছি, পুরোনো আইসিডিগুলোও নতুন নীতিমালার আলোকে আস্তে আস্তে নগরী থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো’স অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ১৯৮৫ সালে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম আইসিডি স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে এনবিআরের একটি অফিস আদেশের আওতায় আইসিডিগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

এরপর ২০১৬ সালে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। বর্তমানে যে ১৯টি আইসিডি কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার মধ্যে তিনটি ২০কিলোমিটারের বাইরে। বাকি ১৬টি ভেতরে। তবে নতুন নীতিমালায় পুরোনো আইসিডিগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএল//


Comment As:

Comment (0)