Untitled-14-2205211045

কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘মানবিক প্রিন্স’

বগুড়া প্রতিনিধি: খাবার সংকটে রয়েছেন কেউ, এমন খবর পেলেই  ছুটে যেতেন তার কাছে। অথবা পৌঁছে দিতেন বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা। শুধু এখানেই শেষ নয়, করতেন সাহায্যও সাধ্যমত! পথশিশু থেকে শুরু করে সব অসহায় মানুষই তার দ্বারা হন উপকৃত।

জনপ্রিয়তা তৈরি করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এরপরই শুরু হয় তার ব্যবসায়ীক অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া।

তার ‘মানবিকতাকে ভালোবেসে’ অনেকেই বিনিয়োগ করেন লাখ লাখ টাকা। তবে এখন তাকেই খুঁজছেন বিনিয়োগ করা সেই মানুষেরা। জমানো টাকা হারিয়ে হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।

অভিযুক্ত সেই ব্যক্তির নাম প্রিন্স সরকার। বছর দেড়েক আগে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় ‘হেলভেশিয়া’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট খুলে শুরু করেন মানবিক কার্যক্রম। এছাড়াও তিনি বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অংশীদার নিয়ে খোলেন ‘মেজবানি খানা পিনা’ নামে আরেক রেস্টুরেন্ট।

এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে তার ভয়ঙ্কর রূপ। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে এখন তিনি নিরুদ্দেশ। পাওনাদাররা পাচ্ছেন না তার নাগাল। অনেকেই ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। আবার অনেকেই লোকলজ্জায় খুলছেন না মুখ। প্রিন্সকে খুঁজছেন নীরবে।

প্রিন্স বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায় পরিবারসহ ভাড়াবাসায় বসবাস করতেন। তিনি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এছাড়াও তার নাম নিয়েও অনেকে সন্দেহপোষণ করছেন। তিনি ভুয়া নাম ব্যবহার করে বগুড়ায় প্রতারণা করতে পারেন বলে অনেকেরই ধারণা।

অভিযোগ উঠেছে, পাওনা টাকা ফেরত চাইলেই টালবাহানা শুরু করেন প্রিন্স। বিভিন্ন কথা বলে দিন পার করেন। তবে গত মঙ্গলবার (১৭ মে) থেকে তাকে আরও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ভাড়াবাসায় গিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। তিনি পরিবারসহ আত্মগোপনে রয়েছেন। এখন টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তার পাওনাদাররা।

বগুড়া শহরের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী এক নারী ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, প্রিন্স অসহায় মানুষদের সহায়তা করতেন। বগুড়ার অনেক সম্মানিত মানুষের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। সবমিলিয়ে তার মানবিক দিক দেখে তাকে বিশ্বাস করেন এবং তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় তার। একপর্যায়ে প্রিন্স তাকে ব্যবসায়ীক অংশীদার করার প্রস্তাব দেন। এতে তিনি রাজি হন এবং প্রিন্সকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা দেন। ব্যাংকের সঞ্চয় ভেঙে তিনি টাকা দেন। টাকা নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন প্রিন্স। পরে টাকা ফেরত চান তিনি। কিন্তু এরমধ্যেই প্রিন্স পালিয়ে গেছেন। এখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি তিনি নিজ পরিবারের কোনো সদস্যকে বলতেও পারছেন না। কারণ তারা জানলে তার সঙ্গেই বাজে ব্যবহার করবেন।

তিনি দাবি করেন, প্রিন্স শুধু তারই টাকা আত্মসাৎ করেননি, আরো অনেক মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার পরিচিত অনেক মানুষ রয়েছেন যারা প্রিন্সের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বগুড়া শহরের কলোনী এলাকার বাসিন্দা মহিদুল ইসলাম সাগর জানান, প্রিন্সের মানবিক রূপ দেখে তার ব্যবসায়ে অংশীদার হওয়ার জন্য তাকে বিশ্বাস করে ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু এরপরই প্রিন্সের ভিন্ন রূপ সামনে আসে। তবে মোট টাকার মধ্যে গত মার্চ মাসে চার লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। বাকি টাকা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।

জলেশ্বরীতলা এলাকার বাসিন্দা ডা. রোজিনা রহমান। তার কাছ থেকেও তিন লাখ টাকা নেন প্রিন্স। গত এপ্রিল মাসে ডা. রোজিনার কাছ থেকে সাতদিনের সময় নিয়ে টাকা ধার নেন প্রিন্স। এরপরে চলতি মাসের ১৫ মে প্রিন্স ভুক্তভোগী রোজিনার এক স্বজনকে জানান ১৭ মে টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু ১৭ মে প্রিন্সকে মুঠোফোনে আর পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, বগুড়ার মানুষদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রিন্স। অধিকাংশ ভুক্তভোগীকেই তারা চেনেন। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে সামনে আসতে চাচ্ছেন না।

বগুড়া সদর থানার ওসি মো. সেলিম রেজা ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই মৌখিকভাবে জানালেও এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএল//


Comment As:

Comment (0)