মিহির

বাজেট (২০২২-২০২৩)

বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন কতটুকু সুরক্ষিত

ড. মিহির কুমার রায়: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে এই খাতের ভূমিকা অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৪৭ শতাংশ, ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী শ্রমশক্তির ৪০.৬২ শতাংশ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত বিধায় মানে কৃষি অর্থনীতি এখনো নিয়োগের বড় ক্ষেত্র। তবে এটিও অনস্বীকার্য যে,  কৃষি খাতের এক সময়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি হার ক্রমে তলানিতে নেমে আসায় খাদ্য শস্যের জন্য আমাদের আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.১৭ শতাংশ, যা বিবিএসের সাময়িক প্রাক্কলন অনুযায়ী হ্রাস পেয়ে চলতি অর্থ বছরে  (২০২১-২২) ২.২০ শতাংশে দাঁড়াবে। এটি সম্ভবত গত কয়েক বছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হারের সর্বনিম্ন রেকর্ড। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান খাদ্য শস্য চাল এবং খাদ্য শস্যের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গমের উৎপাদনের ওপর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার পল্লী খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বার্ষিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী,  স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে দেশের প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদন তিন থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে বিগত ৯ই জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উপস্থাপিত  হয়েছে যেখানে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১৫.৩ শতাংশ,  আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির ৯.৮ শতাংশ,    বাজেটে ঘাটতি দাড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.৫ শতাংশ যা মোট বাজেটের প্রায় ৩৬ শতাংশের মতো,  মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গ্রামীন জীবন ও জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং পল্লী উন্নয়নের কথায় আসলেই কৃষি সবার আগে চলে আসে। যেহেতু কৃষি পল্লী  উন্নয়নের একটি বড় খাত তাই সরকার বাজেটে কেবল কৃষি খাতে ২৪,২২৪ কোটি টাকা আগামী বছেরর বাজেটে প্রস্তাব করেছে আবার তার সাখে যদি মৎস, পশু সম্পদ, বন ইত্যাদিকে যোগ দিলে সার্বিক কৃষি খাতে বাজেট দাড়ায় ২৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা যা মূল বাজেটের ৫.৩ শতাংশ। আবার স্থানীয় সরকার বিভাগের বাজেট ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা,  পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা রয়েছে। কাজেই ব্যাপক অর্থে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ  (৭২,৮৫৫ কোটি টাকা) দেওয়া হয়েছে তা উন্নয়ন বাজেটের ২৯.৬ শতাংশ এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ২০.২ শতাংশ বলে প্রতিয়মান হয়। এখানে উল্লেখ্য যে,  কৃষি যেহেতু একটি অগ্রাধিকারভুক্ত  খাত এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টির এর সংগে সম্পৃক্ত তাই গত বছরগুলোতে এই খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ৩২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা যা গড়ে প্রতি বছর দাড়ায় ৬৫০১.৪ কোটি টাকা এবং আগামী বছরের বাজেটের ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনার প্যাকেজ রাখা হয়েছে ১৫,০০০ কোটি টাকা। তবে আগের সরকারগুলোর তুলনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর সরকার কৃষিতে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, এ সরকারের প্রথম বাজেটে (২০০৯-১০)  কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবে ২০০৯-১০ অর্থবছরের ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হলেও সে অনুপাতে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়েনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে খাদ্য শস্য রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। তবে জ্বালানি ও সারের মূল্য বৃদ্ধি ও খাদ্য আমদানি কমাতে এ খাতে ভর্তুকি আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল। ফল-সবজি ও ডেইরি ব্যবসায় ১০ বছরের ট্যাক্স ব্রেক,  মাছ চাষে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় কর ছাড় করা এবং হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খাবার তৈরির উপকরণে কর ছাড়ের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান হয়েছে। 

বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকার মনে করছে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করন, কৃষি গবেষনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষির বহুমুখীকরন, রপ্তানীমুখী কৃষি পন্যের বানিজ্যিকীকরন,  পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন ও  গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্টি জীবনমান উন্নয়ন ইত্যাদিতে জোড় দিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আগামী বছরের বাজেটে অথনীতির প্রবৃদ্ধির (জিডিপি)  যে টার্গেট ধরা হয়েছে তা অজর্নে কৃষি খাতের গুরত্ব অপরিসীম বিধায় সেই খাতে প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ৪.৫ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে বলে কৃষি অথনীতিবীদগন মনে করেন। কভিড-১৯ দেখিয়ে দিয়েছে আমদানিমুখী চিন্তা পরিহার করে গ্রামীণ অর্থনীতি ও খাদ্য উৎপাদন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে। কারণ বিগত দুই অর্থবছরে কভিডের কারণে ভারতসহ অনেক দেশের জিডিপিতে যেখানে নেতিবাচক সূচক পরিলক্ষিত, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে খাতগুলো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে,  কৃষি ও পল্লী খাত তার মধ্যে প্রধানতম। এই অকালেও বাংলাদেশের জিডিপিতে গড় প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের মতে ৩.৬ শতাংশ,  এডিবির মতে ৫.৫-৬ শতাংশ এবং সরকারি তথ্যমতে ৫.২ শতাংশ হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি যা-ই হোক না কেন তা অর্জিত হয়েছে মূলত কৃষি,  প্রবাসী আয় এবং পোশাক রপ্তানি খাত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কৃষি কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। ফলে,  কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে ও যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরে বোরোতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার,  রিপার বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় দ্রুততার সাথে সফলভাবে ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চল ভেদে ৫০%-৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষি যন্ত্র দেয়া হচ্ছে তথা এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সময় ও শ্রম খরচ কমবে,  কৃষক লাভবান হবে ও বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্পোন্নত দেশের কৃষির মতো উন্নত ও আধুনিক হবে। কৃষি যন্ত্রের প্রাপ্তি, ক্রয়,  ব্যবহার ও মেরামত সহজতর করতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

কৃষি খাতের আগামী বছরের বাজেট পর্যালেচনায় দেখা যায় মুরগি,  মাছ ও গবাদি পশুর খাবার তৈরির উপকরণ আমদানিতে কাঁচামালে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, নিড়ানি, ঝাড়াইকল, কম্বাইন হারভেস্ট,  থ্রেসার, রিপার, পাওয়ার টিলার, সিডার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে,  যা সামগ্রিক কৃষির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। কৃষি খাতের এই বাজেটকে সাধুবাদ জানাতে চাই। তথ্য বলছে বিগত বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ অবহেলিত হয়ে এসেছে এবং কৃষি খাতে ভুর্তুকি অন্যান্য বারের মত এবার অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার যদি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যায় যে জিডিপিতে এর হার মাত্র ২২%  ভাগ যা গত কয়েক বছর যাবত স্থবির হয়ে আছে। আবার ব্যাংকিং খাতের হিসাবে দেখা যায় যে  গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাক্তি পর্যায়ে যে বিনিয়োগ হয়েছে তা সামষ্টিক অথনীতির বিবেচনায় মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশ এবং এতে কৃষি থাতের অংশ আরও কম অথচ ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি বাণিজ্যকরনের উপর জোড় দেয়া হয়েছিল  যেখানে পরিবার ভিত্তিক চাষাবাদকে পরিহার করে খামার ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক চাষাবাদকে (গ্রিন হাউজ) উৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন রুপে আবির্ভূত হয়েছে, ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীগন অসম  প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। বাজার ব্যবস্থাপনায় এই সকল কৃষকদের কোন প্রবেশাধীকার এখনও প্রতিষ্ঠিত  হয়নি যার প্রমান কৃষি পন্য বিশেষত:  কৃষকের ধানের মূল্য না পাওয়া যার প্রভাব পড়েছে ক্রমাগতভাবে কৃষি প্রবৃদ্ধির হ্রাস পাওয়ায়। কৃষি বাজেটের আরও দিক হলো কৃষির প্রক্রিয়া যেহেতু গ্রামীন অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত তাই এর গতিশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্ধ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষি খাতের সব ব্যয় নিম্ন মধ্যবিত্ত,  খুদে ব্যবসায়ী, ভূমি শ্রমিক ও নিঃস্বদের জন্য ব্যয়িত, আছে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সরকার পরিচালিত আটটি ফাউন্ডেশন/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্ম সৃজনে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে এরূপ বরাদ্দের পরিমাণ মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা  (বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশ)। বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে,  ‘পল্লীর দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আয় বর্ধক কর্মকাণ্ড’ বৃদ্ধিতে পল্লী এলাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। তাছাড়াও দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার আগামী বছরের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছে যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা যা মোট  বাজেটে ১৭.৮ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ এবং এই খাতে থেকে পল্লী অঞ্চলে বসবাসকারী অনেকেই সরাসরি উপকৃত হবে। 

কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার বিষয় তাই যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো এক: কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানোর পাশাপাশি তাকে প্রকৃতি বান্ধবও করে তুলতে হবে। জনগনের স্বাস্থ্য,  পুষ্টির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কৃষি ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে সম্ভাব্য খাদ্য বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে,  পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র এবং পারিবারিক কৃষকদের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে; দুই: আগামী অর্থবছরে সরকারি খাতে  কর্মসংন্থান এক শতাংশ বাড়ানো যাবে কিনা তা বলা দুষ্কর এই মুহুর্তে কারন বৈদেশিক বিনিয়োগ নিম্নমূখী, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋন গ্রহন উর্দ্ধমূখী, ব্যাক্তি খাতে বিনিয়োগ নিম্নমূখী  বিধায় কর্মসংন্থান হয় না অথচ দেশে  প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংন্থান সৃষ্টি করে বেসরকারি বিনিয়োগ। প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ কর্ম বাজারে প্রবেশ করে এবং শহরে শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা বেশী যাদের কর্মসংন্থানের ব্যাপারে বাজেটে বরাদ্ধ রাখতে হবে;, তৃতীয়ত: বিশ্ব ব্যাপী মোট খাদ্য উৎপাদনের ৮০ শতাংশই আসে পারিবারিক কৃষির মাধ্যমে যার বিবেচনায় জাতিসংঘ  ইতোমধ্যে (২০১৯-২০২৮) পারিবারিক কৃষি দশক ঘোষণা করেছে এবং একটি বৈশ্বিক কর্ম পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে। এই কর্ম পরিকল্পনার আলোকে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে সরকার এবং কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাই মিলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার নকশা তৈরি অত্যন্ত জরুরি যার জন্য বাজেট বরাদ্ধ বাড়িয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন,  ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্প, সংরক্ষণাগার, যান্ত্রিকীকরণ, বাজার ব্যবস্থাপনা সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও পারিবারিক কৃষির উন্নয়ন,  কৃষি সংশ্নিষ্ট উৎপাদন ও সেবা এবং জৈব কৃষি বা জলবায়ু সহনশীল স্থায়ীত্বশীল কৃষি চর্চায়, যা খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে; চতুর্থত: দেশের অগনিত কৃষক যারা খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন দৃশ্যত: দেখা যায় না।  তাই কৃষক পরিবারের জন্য ভাতা/পেনশনের ব্যবস্থা বাজেটে রাখতে হবে যেমন ভারতের কেরালা রাজ্যে ও কমিউনিষ্ঠ সরকার কৃষকদের জীবন মান রক্ষার জন্য বহু আগে থেকেই এ ব্যবস্থা চালু রেখেছে যা প্রশংসনীয়।  আশা করা যায় বাজেট সংক্রান্ত এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ও স্বাধীনতার পাচ দশক পর এটাই হউক সকলের প্রত্যাশা।

লেখক: অধ্যাপক, গবেষক, ডীন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)