মুনতাসীর মামুন

দূর্ঘটনায় মৃত্যুরোধে কঠোর আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরী

মুনতাসীর মামুন: কিছু দিন পর পর খবরের শিরোনাম হয়- জাহাজ ডুবিতে এত জন, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামে আগুন লেগে এত জন, গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লেগে এত জন, কারখানায় গ্যাস বিস্ফোরনে অত জন, কন্সষ্ট্রাকশন কাজের ছাদ ভেঙ্গে এত জন এবং বাস দূর্ঘটনায় এতজন মারা গেছেন- এগুলো যেন যুগ যুগ ধরে চলতেই আছে।

এভাবে কতদিন এর তো একটা শেষ হওয়া দরকার, একটা ঘটনা ঘটে দুই চার দিন পত্র পত্রিকায় লেখা হয় তারপর সবাই চুপ। সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশী হলেও মিডিয়া, ইউনিভার্সিটি, সিভিল সোসাইটি এবং প্রফেশনাল গ্রুপসহ সকলের দায়িত্ব রয়েছে এই সব দূর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন প্রনয়ণ এবং আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে অনবরত চাপে রাখা।

বুয়েটে একটি কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, এখন মনে হয় আরও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কেমিক্যাল ও পেট্রোলিয়াম ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে, এইসব ডিপার্টমেন্টে কেমিক্যাল ও পেট্রোলিয়াম উপর সেইফটি কোর্স থাকার কথা, কিভাবে বিপদজনক কেমিক্যাল handling, storage and transportation করবে এই সংক্রান্ত সেইফটি রেগুলেশন তাঁরাই তৈরীতে সরকার সহযোগিতা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেইফটির উপর বিশেষে করে কেমিক্যাল ও বিস্ফোরক দ্রব্যের সেইফটি এবং     Occupational Health and Safety এর উপর বিশেষ কোর্স চালু করতে পারে, যা উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই বিশেষ আইন প্রনয়নে সরকারকে সহযোগিতা করে এবং সরকারও এ বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস, উন্নতদেশগুলো সেইফটি সংক্রান্ত অনেক কঠোর আইন তৈরী করে রেখেছে এবং কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে এবং সময়ে সময়ে তা আধুনিক করছে। এই কারনে এরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী কেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম ও জটিল যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করলেও আমাদের দেশের তুলনায় ওইসব উন্নত দেশে দূর্ঘটনার সংখ্যা একবারেই নগন্য।

মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান একবার চলে গেলে তা আর ফিরে আসবে না, একজন মন্ত্রী তার পরিবারের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ একজন কারখানার শ্রমিকও তার পরিবারের কাছ সমান গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশী কারন মন্ত্রী মরে গেলে তার পরিবারের সংসার চালাতে কোনো কষ্ট হয় না আর্থিক নিরাপত্তার কারনে, কিন্তু শ্রমিক মরে গেলে যার আয়ের উপর সংসার চলে তার পরিবারকে রাস্তায় বসতে হয় ।

একজন লোক মরে গেলে এক/দুই লক্ষ টাকা দিলে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, মানুষের জীবন  এত সস্তা হতে পারে না। উন্নত দেশে যেখানে লিভারের একটু অংশ বা একটি কিডনি পেতে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়, সেখানে আমাদের দেশে গাফিলতির মাধ্যমে মানুষ মেরে ১/২ লক্ষ টাকা দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

কর্মস্থলে মালিক পক্ষ থেকে আইনগতভাবে blanket insurance ব্যবস্থা থাকলে সরকার বা মালিক কাউকেই ক্ষতিপূরন দিতে হবে না, ক্ষতিপূরণ দিবে insurance company,  মালিকরা শুধু insurance এর premium দিয়ে যাবে এবং কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে, না করলে আইনে কঠোর জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক একটা মৃত্যুর জন্য কমপক্ষে ১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা থাকবে, তাহলে সকল পক্ষই সতর্ক থাকবে এবং আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতে বের না হতে পারে সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াসলি যত সম্ভব তাড়াতাডি আমলে নিয়ে আইন প্রনয়ন করবে- ততই তা দেশ ও জনগনের জন্য মঙ্গলময় হবে।

লেখক: কানাডা প্রবাসী প্রকৌশলী ও বিশ্লেষক।


Comment As:

Comment (0)