3035

নদীর স্রোতে ভাসছে হাজার কোটি টাকা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের প্রধান খরস্রোতা মনু নদীর ভাঙন রোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকে হাজার কোটি টাকার 'মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা' প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে।

প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাস্কফোর্সের গণনাকৃত জিও ব্যাগ কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও রাতের আঁধারে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। জিও ব্যাগের মুখ কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ পুনরায় ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখছে।

স্থানীয়রা হাতেনাতে এমন অনিয়ম ধরেছেন।

জনপ্রতিনিধি ও নদী তীরে বসবাসকারীদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজসে এমনটি হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল বলছেন, সারা দেশের মানুষ যখন বন্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন তখনই মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিলুটে ব্যস্ত। এই প্রকৌশলী নিজের এবং ঠিকাদারের আখের গোছাতে মরিয়া।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারে জিও ব্যাগ নদীর কিনারে ফেলার কথা থাকলেও ব্যাগ নদীর মাঝখানে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে এমনটি হচ্ছে। এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী যা বলছেন তাই হচ্ছে।

এদিকে সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিবাহিত হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সবগুলো পয়েন্ট। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে হতাশ স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে ওই প্রকল্প ২০২০ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ২ বছরে মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যেও বেশির ভাগ ভেসে যাচ্ছে নদীর স্রোতে।

স্থানীয়রা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলে রাতের আধাঁরে টাস্কফোর্সের গণনাকৃত এক হাজারের বেশি জিও ব্যাগ মনু নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ রবিবার রাতে এলাকার সুন্দর চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই দেখতে পান নদীর মাঝে শ্রমিকরা জিও ব্যাগ ফালাচ্ছেন।

এদিকে নদীর পানি প্রতিরক্ষা বাঁধের করুণ অবস্থায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয়রা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছে যান কিছু জিও ব্যাগের জন্য। তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এসব জিও ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ম্যানেজার জিও ব্যাগ নেই বলে তাদের জানিয়ে দেন। পরে এলাকাবাসী বালির গর্ত থেকে আড়াই মাস আগের টাস্কফোর্সের গণণাকৃত জিও ব্যাগ উদ্ধার করেন। এসময় পাশের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে কয়েক হাজার টাস্কফোর্সের গণণাকৃত খালি জিও ব্যাগ দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিষয়টি জানান। তারা ঘটনাস্থলে এসে ছেঁড়া ও খালি ব্যাগ জব্দ করেন।

আদনাবাদ গ্রামের অনেকেই বলেন, জিও ব্যাগ ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না ফেলে ঠিকাদারের লোকজন রাতে নদীতে কখনও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আবার কখনও ব্যাগের মুখ ব্লেড দিয়ে কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ সংরক্ষণ করে রাখেন। ঠিকাদারের লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় এমনটি করছে।

ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান বলেন, আমার সামনে জিও ব্যাগ পানিতে ফেলতে দেখেছি। তাদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে উপর মহলের ভয় দেখায়।

এম এম বিল্ডার্সের ম্যানেজার মো. সুহান আলী খালি জিও ব্যাগ ঘরে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুলে রেখেছি।

রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, আমার এলাকার মানুষ সবসময় বলে আসছে কাজের অনিয়মের কথা। এখানে এসে দেখলাম এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য। আমরা প্রায় ১০০ মানুষের সামনে নদীর স্রোতে জিও ব্যাগ ফেলতে দেখলাম। এর চেয়ে সত্য আর কী হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ সঠিক। কে এরকম কাজ করল বুঝে উঠতে পারছিনা।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্র ধর বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ছেঁড়া ব্যাগ জব্দ করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেব।

নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। 

বিনিয়োগবার্তা/এসএল//


Comment As:

Comment (0)