আব্দুল মোমেন

একসাথে স্বাধীন হলেও কেন বাংলাদেশ ৫০ বছর পিছিয়ে

আব্দুল মোমেন: আপনারা জানেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ- দুটো দেশই ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। মরুভূমি অধ্যুষিত একটি দেশে এখন কেন সারাবিশ্বের পর্যটক ও বিনিয়োগকারীরা আসতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন? পক্ষান্তরে নৈসর্গিক বাংলাদেশ কেন বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে পারেনা?

আসুন, একটু বিস্তারিত জেনে নেই তফাৎটা কোথায়?

আমি গত ১০ বছরে অনেক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ প্রদান করি এবং কয়েকজনকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভিজিট করাই। তাদেরকে আমি প্রথমে বিডা, RJSC, আমদানি রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, কাস্টমস, ভ্যাট, ট্যাক্স অফিসে নিয়ে যাই।

এসময় তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করে।

তাদের বিশ্লেষণগুলো হলো:

 

** বিদেশিদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে সময়। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাগজপত্র ও রেসিডেন্স ভিসা প্রসেসিং করতে সময় লাগে প্রায় একমাস।

 

** পাশাপাশি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপেশাদারসুলভ আচরণ, সিঁড়ি এবং লিফটে পানের পিক ও থুথুর দাগ, টয়লেটে তো যাওয়াই যায়না- চরম দুর্গন্ধ, না আছে হ্যান্ড শাওয়ার, হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড ও টিস্যু পেপার।

** ঠান্ডা কিংবা গরম চা, কফি বা পানির কোন ব্যবস্থা নেই। ঘুষ, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সিন্ডিকেট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা তো আছেই। কর্মকর্তা কর্মচারীদের নেই কোন ড্রেস কোড। ভাঙ্গা রাস্তা-ঘাট ও যানজটতো আছেই।

গত কয়েক বছরে আমি দুবাইতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বেশ কিছু বিনিয়োগকারীর বিজনেস লাইসেন্স, ভিসা এমিরেটস আইডি ও ব্যাংক একাউন্ট করতে সহযোগিতা করি।

** এখানে সরকারি অফিসগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও পরিপাটি।

** পুরুষরা অফিসিয়াল ড্রেস হিসেবে জুব্বা এবং মহিলারা আবায়া বা বোরখা পরিধান করে থাকেন।

** কাস্টমার কেয়ারে যারা থাকেন তারা অত্যন্ত ইয়াং ও দক্ষ, সুশ্রী, স্মার্ট, বিনয়ী- এককথায় শতভাগ প্রফেশনাল হয়ে থাকেন।

** তারপরও সব অফিসারের পেছনে থাকে সিসিটিভি যাতে অফিশিয়াল কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজে সময় নষ্ট না করেন। অফিসের টিম লিডার সবসময় মনিটর করেন কোন কাস্টমার কোথায় কোন প্রবলেম ফেস করছেন কিনা।

** পাবলিক টয়লেট যাকে অনেকেই রেস্টরুম বলে থাকেন সেখানে গেলে আপনি এয়ার ফ্রেশনার, এসি, হ্যান্ডওয়াশ লিকুইড, একেবারে পরিষ্কার ও শুকনা টয়লেট, হ্যান্ড শাওয়ার, টিস্যু পেপার পাবেন।

** চা-কফি এবং ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যবস্থাতো আছেই।

** পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা মসজিদ ও রেস্ট নেওয়ার জায়গা আছে।

** প্রেগন্যান্ট মহিলারা, ফিজিক্যালি ডিজেবল ও সিনিয়র সিটিজেনরা আলাদা প্রিভিলেজ পেয়ে থাকেন সর্বক্ষেত্রে।

** বাচ্চাদের জন্য আছে খেলার রুম।

** সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে, বিনা ঘুষে ১০০% মালিকানায় কোম্পানির লাইসেন্স।

** দুবাই চেম্বার অব কমার্সের মেম্বারশিপ।

** মেমোরেন্ডাম পাবেন পাক্কা এক ঘন্টায়।

** তিন দিনের মাথায় মিলবে রেসিডেন্টস ভিসা।

** এমিরেটস আইডি পেতে লাগবে মাত্র ৫ দিন।

** এখানে রাস্তাঘাটে জোড়াতালি কিংবা কোন রকমের গর্ত খুঁজে পাবেন না।

** গাড়ি তো পানির দরে পাওয়া যায়।

** অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো আছেই।

আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা এখানে ভিজিটে কিন্তু এগুলো নিজের চোখে দেখেছেন! কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশে যাওয়ার পথেই সবকিছু ভুলে যান!!

লেখক:  সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বিজনেস এনালিস্ট।


Comment As:

Comment (0)