শাহ নেওয়াজ মজুমদার

ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিটির অবদান

মো: শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার: তথ্য প্রযুক্তির (আইটি) মূল চালিকা শক্তি হল ইন্টারনেট, যা বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল অর্থনীতির নিয়ামক। ভিন্ন ভাষায় বর্তমান বিশ্বে অর্থ ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট অর্থনীতিও বলা হয়ে থাকে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের স্বাভাবিক গতিশীলতার চেয়ে বহুগুনে বেশি ও ব্যাপক ক্রিয়া কর্মেও সমাধান দেয়া সম্ভব।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বাহিরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছে সফটওয়্যার নির্মাতারা। বর্তমান সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্ঠা সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানের কারণেই তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে অভুতপূর্ব সাফল্য এসেছে। বর্তমানে সফটওয়্যার শিল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব হয়েছে।

বিগত ১৪ বছরে তথ্য প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতের যথাযথ উন্নতির কারনে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, সরকারী ও বেসরকারী সেবা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে। দিন দিন প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ সাধন মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করছে। এককথায় প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে মানুষের ভার্চুয়াল বন্ধু। প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবার কারণে কমেছে সময় ও ভোগান্তি। জীবনযাত্রার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কর্মসংস্থানও।

এছাড়া আইসিটি বিভাগ সারাদেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সার তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ও বেকারত্ব নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সরকারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশে চার স্তম্ভ কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট ও ইন্ডাষ্ট্রি প্রমোশনকে ঘিরে দেশে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণও বিকাশ বেশি ঘটে।

ইতিমধ্যে দেশে ৫ম হাইটেক/আইটি পার্ক নির্মিত হয়েছে। ১০৮ টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাড়াবে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা।

এক দশকের বেশি সময় ধরে সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তি সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত থেকে রপ্তানিতে বেশ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৩০ কোটি ডলার (১.৩ বিলিয়ন ডলার) সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য রপÍানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও টার্গেট ছিল ১৫০ কোটি ডলার। সেবা পণ্যেও নির্মাতাদের সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমগীর করীর গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে সফটওয়্যার রপ্তানী ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।

আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার ও অ্যাপ মার্কেটেও বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনীয়। এদিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ধরনও পাল্টে দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যাংককে নিয়ে গেছে জনগণের দোরগোড়ায় ঘরের দুয়ারে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের ব্যবসার ফেইসবুক পেইজ তৈরি করে ব্যবসা করছে লাখ লাখ তরুণ উদ্যোক্তা। ফোরজি টেকনোলজি ব্যাবহারে বড় বড় বাজার তৈরি করেছে ই-কমার্স খাতেও। অন্যদিকে দাপ্তরিক কাজেও ডিজিটাল অনেক সুবিধা ভোগ করছেন আমাদের দেশের নাগরিকরা। সরকারি বেসরকারি খাতে সকল সেবা এখন মিলছে অনলাইনে।

তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এবং ডিজিটালাইজেশনের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে এটি দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর প্রধান মেরুদন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সর্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন মতো অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। বর্তমান এই ডিজিটালাইজেশন আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পার্টনারেরা তথ্যানুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো যেমন হাইটেক পার্ক সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক, সবখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে পারলে আরও দ্রুত সফটওয়্যার খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।

সরকারি ও বেসরকারী বিনিয়োগ অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪১ সালে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে তৈরি পোশাক শিল্পকে পেছনে ফেলে জিডিপিতে বড় অবদান রাখবে। এভাবেই বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নতির পেছনে আইসিটি খাত ব্যাপকভাবে অবদান রেখে চলেছে।

 

লেখক: কলামিস্ট, হেড অব অপারেশন ও সহকারী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম।

বিনিয়োগবার্তা/এসএনএম/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)