করোনাকালে পোল্ট্রিশিল্প

বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ড: মিহির কুমার রায়: সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশের যে স্বপ্নে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সংস্থাটি বিগত ১২ই মার্চ শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল যেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে এই সম্মেলনে অংশীদারিত্ব করেছিল। এখানে উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াং চেন ঝাং, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথী হিসাবে উপস্থিত থেকে এই সম্মেলনের উদ্ভোধন করেছিলেন এবং তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশের যে স্বপ্নে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, সেই যাত্রাকে মসৃণ করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য  বিশ্বের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আসুন, বিনিয়োগ করুন, বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত আপনাদের আগমনের জন্য। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেই বিনিয়োগ করুন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার এই মাসে আমি বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বিনিয়োগকারীদের ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত, সমৃদ্ধ এবং উদ্ভাবনী স্মার্ট দেশ হিসেবে বিনির্মাণের জন্য আমাদের অভিযাত্রায় যুক্ত হতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবার জন্য পাঁচ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের দেশের জন্য একই সঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমরা আমাদের কঠোর বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতাও অর্জন করব। আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে সেগুলো আমরা কিভাবে মোকাবিলা করতে পারি এবং আমরা তা ইনশাআল্লাহ পারব।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় তার সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাণিজ্যিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি করেছে, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পন্থা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। 

সরকারপ্রধান বলেন, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে, যেখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে যে আমরা কোনোমতেই ব্যর্থ হবো না। যে কোনো ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হবো প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে। কেননা আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ‘এফডিআই’ এবং স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উভয়ের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ‘বিডা’ এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ  ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে ৫০টি সংস্কার এবং আগামী তিন বছরে ১শ’টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে। যেন ওই লাল ফিতার যে দৌরাত্ম্য টানা থাকে, সেটা সরিয়ে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ‘বেজা’ ২০৩০ সালের মধ্যে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্প নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা শিল্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি চমৎকার নীতি নির্দেশনাও প্রদান করবে। মাত্র ১৪ বছরে সকলের সহযোগিতায় তার সরকার বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক  মৌলিক বিষয়সমূহ এবং বাণিজ্য সংহতকরণ বাংলাদেশকে গত দশ বছরে গড়ে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি  অর্জনে সহায়তা করেছে। এমনকি কোভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আট শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে।  জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বর্তমানে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই  সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। 

কোভিড-১৯ এর অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব মন্দার আঁচ না এলে এর মধ্যে আরও দুই থেকে তিন ভাগ দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব হতো বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। এজন্য ব্যক্তি খাতে ভোগ বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালী গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বেসরকারি খাতকে উন্মুক্তকরণ এবং সর্বোপরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে কৃতিত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করা হচ্ছে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। তার সরকার ব্যাপকহারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণের তথ্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশে ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ বিদ্যমান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশাল কর্মীবাহিনী থাকার এবং কৃষি খাতের বিভিন্ন সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ৬৮ দশমিক চার শতাংশ মানুষ কর্মজীবী বয়স-বিভাগে অবস্থান করছে, সহজেই প্রশিক্ষণযোগ্য একটি তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা বেসরকারি বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগে অবদান রাখতে পারে, ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যে কোনো বিনিয়োগে মূল্যবান অবদান রাখতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আইসিটি খাতে প্রায় এক দশমিক চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এই খাতে রপ্তানি আয় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। সরকার ৩৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছে যেগুলোও বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াবে এবং ন্যূনতম এক দশমিক দুই তিন শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই, বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এই রূপকল্প অর্জনের জন্য তার সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং অষ্টম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। যেখানে বেসরকারি এবং বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি কৌশলগত পথরেখা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি প্রতি বছর গড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে বলে আশা করি। রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী তার সরকার এফডিআইসহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক চার-তিন শতাংশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে, আর তখন যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়। একে অনেক উচ্চকাঙ্খা মনে হলেও সবসময় একটা ভালো লক্ষ্য থাকা উচিত বলেও এ প্রসঙ্গে তার অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে তিন কোটি ৪০ লাখ, ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার, কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশকে নিয়ে তার ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা যা জাতী গর্বভরে স্মরন করবে। বিজনেস সামিটের সুপারিশ প্রণয়নের মাধ্যমে তিন দিনের আয়োজন শেষ হয়। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে  অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করেছেন, সেসবের সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন। এ সামিট নিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে, তা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, আমাদের দেশে শ্রম ও বিভিন্ন পরিষেবা সুলভে পাওয়া যায়। আমাদের বিশ্বাস, এ দেশে বিনিয়োগের সুবিধাগুলো সম্পর্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অবগত। তারপরও বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশে প্রত্যাশিত মাত্রায় কেন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সামিটে উঠে আসা বিনিয়োগের সমস্যাগুলো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী উভয়ের ক্ষেত্রে সমান হলেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করলে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়বে। আর এটি আগামী দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ এখনো অনুকূল নয়। এ কারণে নতুন শিল্পদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ বোধ করেন না। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও দেশে কেন ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সাধারণভাবে বলা যায়, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশে সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় বাধা। আমরা আশা করব, এক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ ডুয়িং বিজনেস’কে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাংকের এ বিষয়ক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অতীতের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় একে বড় ধরনের অগ্রগতি বলা যায় না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে, ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সিপিডির জরিপে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া দরকার। দেশে বিনিয়োগের বাধা হিসাবে দুর্নীতি ও অদক্ষ আমলাতন্ত্রের বিষয়টি বহুল আলোচিত। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর ২০২৬ সাল থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা আর থাকবে না, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল খুঁজে বের করতে হবে, এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার কৌশলও খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ পরিবেশ এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সার্বিক অবস্থাও বিবেচনায় নেন। কাজেই বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে বর্তমান উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আগামী দিনের সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

লেখক: সিন্ডিকেট সদস্য, ডীন ও অধ্যাপক, সিটি ইউনিভাসিটি ও সাবেক জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ  সমিতি, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)