আইপিওর অর্থ অপব্যবহার: আমান কটনের এফডিআরের লেনদেন স্থগিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থ কাজে না লাগিয়ে এফডিআর করেছে পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। ওই এফডিআরের বিপরীতে আমান গ্রুপের অন্য কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২সিসি এর অধীনে আইপিওর সম্মতিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন। ফলে, আইপিওর টাকা অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি )।
আইপিওর টাকার অপব্যবহার বন্ধে আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের এফডিআরের বিপরীতে নেওয়া ঋণের লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে থাকা কোম্পানিটির এফডিআরের লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকটিকে দেওয়া বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমান কটন আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলন করা ৭৩ কোটি টাকা দিয়ে একটি এফডিআর করেছে। এ বিষয়টি তদন্তে বিএসইসি গত ২৯ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ মে আমান কটনকে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে আইপিওর মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহের কমিশন অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত আইপিওর টাকা ব্যবহারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ কোটি টাকাও ব্যবহার করেনি। বরং আইপিওর ৭৩ কোটি টাকা কোম্পানিটি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে জমা রেখেছে। যা আমান ফুডস লিমিটেড এবং আকিন ক্যারিয়ার লিমিটেডের অনুকূলে ঋণ প্রদানের জন্য এফডিআরের অধীনে লিয়েন বা জামানত করে রাখা হয়েছে। এতে আমান কটন আইপিও আয়ের অপব্যবহার করেছে, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২সিসি এর অধীনে আইপিওর সম্মতিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি দ্বারা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংককে কমিশনের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আমান কটনের নামে জমা থাকা এফডিআর হিসেবে ঋণের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হলো। এই চিঠি জারির তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি বিএসইসির কমিশনের ৮০৭তম সভায় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের চেয়্যারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুর ইসলাম, পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক মো. তরিকুল ইসলামকে ৩ কোটি টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিচালককে জরিমানা ছাড়াও ৭৩ কোটি টাকা স্থায়ী আমানতের লিয়েন বাতিল করে সাত দিনের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও সভায় আমান কটনের নিরীক্ষক এটিএ খান অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টসকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ধারা ১৮ অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪৯.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৪.২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬.০৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। সোমবার (১৭ এপ্রিল) ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ২৬.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//