শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে ‘বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’: শরীফ এম এ রহমান

একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজারের জন্য শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী খুবই আবশ্যক। আর এই বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’ একটি অনন্য প্রয়াস। সরকার ঘোষিত দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’ এর উদ্যোগের কারণে দেশের মানুষ এখন পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও এ ধরণের সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থাৎ ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখাগুলোর মাধ্যমে এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সাধারণ মানুষ এতে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। এক কথায় নিঃসন্দেহে দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’ গ্রহণের ফলে আমাদের পুঁজিবাজার দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে।

একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শরীফ এম রহমান

নিম্নে সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ পা ঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো

পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বলুন

শরীফ এম এ রহমান: পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা এখন অনেক ভাল। অনেক দিন পর পুঁজিবাজারে গতি সঞ্চারিত হচ্ছে এবং যা বর্তমানে একটি সুন্দর ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরী করছে। ২০১০ সালের বিরাট ধ্বসের পর এ বাজারের সঙ্গে সংশি¬ষ্ট সকলেরই মনোবল  ভেঙ্গে গিয়েছিল; যা বর্তমানে কিছুটা হলেও সকলের মধ্যে একটি আস্থার জায়গা তৈরী করে দিয়েছে। সবাই আবা র নতুনভাবে বাজারকে নিয়ে ভাবছেন। এখন দেশে ব্যাংকের সুদ হার কমিয়ে দেওয়া হ য়েছে। তাই সাধারন মানুষ টাকা রাখা বা বিনিয়োগে র বিকল্প জায়গা খুঁজছেন। আর মানুষের আস্থার এই জায়গাটি হতে পারে পুঁজিবাজার। এছাড়া ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোও বাজারে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। এছাড়া সরকারের নীতিসহায়তা তথা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক বিভিন্ন আইন কানুন তৈরী এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে বাজারে অনেক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে এনেছে। বাজারের সঙ্গে সংশ্লি¬ষ্ট সকলেই এখন সচেতন। আর এসব কারণেই বিনিয়োগ বাড়ছে, বাজারে এখন নতুন বিনিয়োগকারী আসছে, নতুন টাকা প্রবেশ করছে, বাজারে মূলধন বাড়ছে এবং সেইসাথে বাজারের গভীরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুলাংশে। সবমিলিয়ে বর্তমান পুঁজিবাজার একটি আশা জাগানোর মত অবস্থায় রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। এই অবস্থা বজায় থাকলে খুব দ্রুতই জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে পুঁজিবাজার।

‘ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন?

শরীফ এম এ রহমান: নিঃসন্দেহে ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম’ নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি ভাল উদ্যোগ। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য এর বিকল্প কিছু নাই। এই উদ্যোগের কারণে সারাদেশের মানুষ পুঁজিবাজার সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন। মূলতঃ আমাদের দেশের মানুষ পুঁজিবাজার সম্পর্কে তেমন একটা বোঝেনা এবং একটা অজানা সংশয় তাদের মধ্যে সর্বদা কাজ করে। এ কারণে তারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভাবতে এবং আসতে কোনটাই চান না। সেজন্য পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাদেরকে বোঝাতে হবে, এই বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে হবে।

‘একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজারের জন্য শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী খুবই প্রয়োজনীয়, যা করতে পারে একমাত্র ‘বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’। জেনে-বুঝে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে এ বাজার থেকে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নাই, যা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারছেন।’

দেশের মানুষের কাছে প্রচুর টাকা অলস পড়ে আছে। কিন্তু কোথায় কিভাবে বিনিয়োগ করবে, কিংবা বিনিয়োগ করলে কিভাবে তারা লাভ খুঁজে পাবে- এসব নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরণের আশংকা বিদ্যমান। ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম এমন একটি বিনিয়োগবান্ধব কার্যক্রম, যা মানুষের মধ্যে পুঁজিবাজার সম্পর্কে আশংকার পরিবর্তে আস্থার জায়গা তৈরী করে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে আসতে হলে ফিনান্সিয়াল লিটারেসি বুঝতেই হবে। সর্বোপরি, কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, কোম্পানির আর্নিংস, তাদের সম্পদ, ভবিষ্যৎ গ্রোথ ইত্যাদির বিচার-বিশ্লে¬ষণ জানতে হবে। আর এসব বিষয়ে জ্ঞান আহরণের সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হলো বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’।  নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে একাত্ন হয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও (ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত শাখাগুলোর মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করেছি। এতে বাজারের ব্যাপ্তি বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা সচেতন হচ্ছেন। এরফলে বাজারের ভাল শেয়ার সম্বন্ধে তারা নিজেরাই বিচার বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। জেনে-বুঝে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে এ বাজার থেকে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নাই, যা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারছেন। আমি বিশ্বাস করি, একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজারের জন্য শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী খুবই প্রয়োজনীয়, যা করতে পারে একমাত্র ‘বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’।

পুঁজিবাজারের ব্যাপকতা বাড়াতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

শরীফ এম এ রহমান: পুঁজিবাজারের ব্যাপকতা বাড়াতে ভাল মানের কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী থাকতে হবে। বাজারে নতুন প্রোডাক্ট আনতে হবে; ডেরিভেটিভস, ইটিএফ ও বন্ড মার্কেট সচল করতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, দায়িত্বশীল ও বড় মাপের বিনিয়োগ আনতে হবে। আর একটি কথা হলো- ভাল কোম্পানিগুলো বাজারে আসবে কিছু পাওয়ার আশায়। তাদের সেই চাহিদা পূরণ করতে হবে। আর তা নাহলে কেন বড় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে! বাজারে ভাল কোম্পানি আনতে হলে তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি- তারা বড় ও ভাল কোম্পানির শেয়ার খুঁজে বেরায়। তারা প্রথমেই জানতে চায়, বড় শিল্প গ্রুপের কোন কোন কোম্পানি বাজারে তালিকাভূক্ত রয়েছে? তারা দেখে যে, কোন কোম্পানির লিক্যুইডিটি কত? কোন কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল বেশি? কোন কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? আর এসব চাহিদার জোগান দিতে পারে একমাত্র বড় কোম্পানিগুলোই। আমাদের এখানে দিনে গড়ে হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হয়, এটি যথেষ্ট নয়। এই পরিমান কমপক্ষে চার/পাঁচ হাজার কোটি টাকা থাকা উচিৎ ছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দিনে গড়ে ৪ লক্ষ কোটি রূপি টার্নওভার হয়। সেই হিসাবে আমাদের বাজারে টার্নওভার কত কম! তা হিসাব করলেই অনুমেয়। তাই আমি বলবো- যেকোনো উপায়েই হোক বড় বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার পদক্ষেপ নিন। তাহলেই এই বাজার বড় হবে; এর গভীরতা ও ব্যাপকতা বাড়বে বহুলাংশে।

 

বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (এফপিআই) বাড়াতে আপনার প্রতিষ্ঠান কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে?

শরীফ এম এ রহমান: ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক নম্বর। প্রতিনিয়ত আমাদের টিম বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে। তাদেরকে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। ভাল গবেষণালব্ধ তথ্য উপাত্ত আমরা তাদেরকে দেওয়ার চেষ্ঠা করছি। কোম্পানিগুলোর রোড শোতে তাদেরকে আনার চেষ্ঠা করছি। তারা আমাদের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর মৌলভিত্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের এই প্রচেষ্ঠা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। একটি বিষয় না বললেই নয়, ২০১০ সালে বাজারে বড় ধ্বসের পর অনেক আইন কানুনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শিথিল করা হয়েছে।  আরও একটি কথা হলো- নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের মধ্যে-আর্নিস কল একটি। এই পদক্ষেপ কারণে কোম্পানিগুলোর আর্নিংস সম্পর্কে সবাই জানতে পারছে। এই পদ্ধতিটি বিদেশিদের খুবই আকর্ষণ করে। এসব বিষয় শুধু ব্রোকারেজ হাউজের একার নয়; বাজারের সঙ্গে সংশ্লি¬ষ্ট সকলেরই কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংক, এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসমূহ সকলকেই সমান মানসিকতা নিয়ে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।

২০১০ সালে বাজারে বড় ধ্বসের পর অনেক আইন কানুনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শিথিল করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে এসবে মধ্যেআর্নিস কল একটি এই পদক্ষেপ কারণে কোম্পানিগুলোর আর্নিং সম্পর্কে সবাই জানতে পারছে এই পদ্ধতিটি বিদেশিদের খুবই আকর্ষণ করে।’

 

রাষ্ট্রায়ত্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভূক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিভাবে তাদেরকে পুঁজিবাজারে আনা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

শরীফ এম এ রহমান: আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিতো সরাসরি তালিকাভূক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসবে। এটি আসলে সরকারের সদিচ্ছার উপরই অনেকাংশে নির্ভর করে। সরকার যদি চায় যে, এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে অফলোড করবে, তাহলেই কেবল তা সম্ভব হবে। অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো বছরের পর বছর ধরে লোকসানে রয়েছে। বাজারে তালিকাভূক্ত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা বাড়বে। সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসানের কারণ নিয়ে গবেষণা করবে, তাদের হিসাব নিকাশে সচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেজন্য এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আনা খুবই জরুরী। আরেকটি কথা হলো- সরকারের অনেক বড় বড় প্রকল্পের আর্থিক যোগানদাতা হতে পারে পুঁজিবাজার। সরকার চাইলে বিদেশিদের কাছ থেকে কঠিন শর্তে লোন না নিয়ে বাজারে শেয়ার অফলোড করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু কেনো সে ধরনের কিছু আমাদের এখানে হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়!

সরকারের জোড়ালো পদক্ষেপের উপরই রাষ্ট্রায়ত্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাজারে তালিকাভূক্তি নির্ভর করছে সরকার চাইলেই তারা বাজারে আসতে বাধ্য এছাড়া সরকারের অনেক বড় বড় প্রকল্পের আর্থিক যোগানদাতা হতে পারে পুঁজিবাজার বিদেশিদের কাছ থেকে কঠিন শর্তে লোন না নিয়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে কিন্তু কেনো সে ধরনের কিছু আমাদের এখানে হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়!’

অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোরও একই অবস্থা। এদেশে অনেক বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে কাজ করছে। এদেশের জনগণ শুধু তাদের কাস্টমার হিসাবেই রয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ব্যবসা করলেও তারা আমাদের পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। কেনো তারা আমাদের পুঁজিবাজারে আসতে চায় না; তা খুঁজে বের করা দরকার। এ বিষয়টিও সরকারের উপরই নির্ভর করে বলে আমি মনে করি। সরকার চাইলেই তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। দু’ভাবে তাদেরকে বাজারে আনা যায়। আইনি বাধ্যবাধকতা দিয়ে আর ট্যাক্স ভ্যাটের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে। তালিকাভূক্ত  হলে এক ধরনের ট্যাক্স-ভ্যাট আর তালিকাভূক্ত  না হলে আরেক ধরনের ট্যাক্স-ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে। আমি মনে করি, যে কোনো উপায়েই হোক এসব কোম্পানিকে বাজারে আনা প্রয়োজন। তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল অনেক। এসব কোম্পানি বাজারে আসলে বাজার মূলধন অনেক বাড়বে, টার্ণওভার বাড়বে, বাজার বড় ও আন্তর্জাতিক মানের হবে।

কোন কোন বিশেষত্বে¡ কারণে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের প্রতি বিনিয়োগকারীরা উদ্বুদ্ধ হবেন?

শরীফ এম এ রহমান: ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ বিশ্বাস করে- উত্তম সেবাই জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায়িক সুনাম এনে দিতে পারে। সে লক্ষ্যে আমাদের হাউজ কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন রকমের সেবা দিয়ে আসছি। এখানে নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘অপরাজিতা’ নামে আলাদা একটি প্রোডাক্ট চালু করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদেরকে এই প্রোডাক্টের মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগে আহ্বান জানাচ্ছি।

‘ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামের’ আওতায় সারাদেশে আমাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এসব কাজে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি।

আমাদের সকল শাখায় রয়েছে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এ্যানালাইসিস টিম। অত্যন্ত মেধাবীদের দিয়ে পরিচালিত এই টিম বিনিয়োগকারীদের সবসময়ই কোম্পানিগুলো নিয়ে গভীর এনালাইসিস দিয়ে আসছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি বাছাই করতে সক্ষম হচ্ছেন। এছাড়া আমরা পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ঘোষিত ‘ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামের’ আওতায় সারাদেশে আমাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এসব কাজে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি।

 

‘ফিনান্সিয়াল রিপোটিং এ্যাক্ট সম্পর্কে বলুন এর ফলে দেশের আর্থিক খাতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে?

শরীফ এম এ রহমান: নিঃসন্দেহে ফিনান্সিয়াল রিপোটিং এ্যাক্ট’ প্রণয়ন অত্যন্ত সময়োপযোগি একটি সিদ্ধান্ত। এর ফলে দেশের আর্থিক খাতে সচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়। এই আইনের ফলে কোম্পানিগুলো মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে না। আর যদি করেও তাহলে কোম্পানি এবং অডিটর উভয়কেই জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। এ আইনের ফলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিংবা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরী করা যাবে না। পাশাপাশি, কোম্পানিগুলো বিকল্প আর্থিক প্রতিবেদনও তৈরী করতে পারবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘এফআরএ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ‘এফআরএ’ প্রতিষ্ঠিত হলে বিনিয়োগকারীদের আর প্রতারিত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

বিনিয়োগবার্তাবিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কিছু বলুন

শরীফ এম এ রহমান: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ হলো- নিজের এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত অর্থ থাকলে, তা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসুন। কখনোই ধার-কর্জ করা টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পূর্বে এ সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুন। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ডিএসই, এসইসিসহ বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নিজের এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের পর অতিরিক্ত অর্থ থাকলে, তা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসুন। কখনোই ধার-কর্জ করা টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পূর্বে এ সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুন।’

এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলো বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও এ বিষয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজার বিষয়ক জ্ঞান দানের জন্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসুন। তাহলে কোম্পানিগুলোর সকল বিষয়াদি নিয়ে নিজেই বিশ্লেষণ করতে পারবেন। এরফলে আপনার বিনিয়োগ আরও সহজ ও নিরাপদ হবে। আপনি লাভবান হতে পারবেন।

 

(শামীম/ ০১ অক্টোবর ২০১৭)

 

 

 

 

 

 

 


Comment As:

Comment (0)