উন্নয়ন সহযোগিদের আস্থার সংকট দূর করতে জোড়ালো পদক্ষেপ নিন

বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহতের ঘটনায় হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনিভাবে ইটালির ৮জন, ভারতের ১জনসহ মোট ১৭ বিদেশি নাগরিক হত্যায় অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরাও শঙ্কা ব্যক্ত করেছে। এ কারনে উন্নয়ন সহযোগিদের মাঝে চরম আস্থার সংকট তৈরী হচ্ছে। যদিও জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপাতত বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।

দেশে যেভাবে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে এবং তাতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিদেশীরা নিহত হচ্ছেন, তাতে দীর্ঘমেয়াদে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। এরই মধ্যে অনেক বিদেশী নাগরিক তাদের নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। বিদেশীদের সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত অনেক অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়েছে। পর্যটকদের আগমন কমে এসেছে।

এমন অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদেশনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমূহ শঙ্কা থেকেই যাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত অনুদানসহ বাংলাদেশকে মোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার অর্থসহায়তা দিয়েছে জাইকা। সম্প্রতি বাংলাদেশের ছয়টি প্রকল্পে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণসহায়তা চুক্তি করেছে জাইকা। ঢাকা র্রাপিড ট্রানজিট, যমুনা রেলসেতু নির্মাণ, আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুকেন্দ্র, এনার্জি ইফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং ও ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহান্সমেন্ট প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা মোকাবেলায় ২০২১ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে জাইকার ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। যমুনা নদীর ওপর প্রথম রেলসেতু নির্মাণে জাপানের দেয়ার কথা ৮ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্পটিতে জাইকা দেবে ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জাপানি ঋণ মওকুফ তহবিলের সহায়তাপুষ্ট ১৩টি প্রকল্প ছিল। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সন্ত্রাসী হামলার প্রভাব পড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পিছিয়ে পড়বে উন্নয়ন কার্যক্রম। ইটালীর নাগরিকদের হত্যার কারনে দেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টস সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ খাত ধ্বংস হলে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।

এমতাবস্থায় বিদেশী বিশেষত বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্তদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে উদ্যোগ থাকা চাই। ইতিবাচক বিষয় হলো, সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয় বলেই খবর মিলছে। সেক্ষেত্রে বিদেশীদের নিরাপত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। একদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতছানি, অন্যদিকে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি। এর মধ্যে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তার পথ রেখা সরকারকেই ঠিক করতে হবে। প্রথমেই সন্ত্রাসী হামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ধরনের উদাসীনতা দেখানো চলবে না। নইলে সন্ত্রাসীরাই এতে উত্সাহিত হবে অধিক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্রসফায়ার কোনো সমাধান নয়। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শিকড় সন্ধানে কাজ করতে হবে। অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের পাশাপাশি যারা এগুলো উত্সাহিত করছে, তাদেরও চিহ্নিত করা জরুরি।

সবাইকে বুঝতে হবে, আজকের পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান এবং তা রোধ করা না গেলে সুফল নাও মিলতে পারে। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ও সন্দেহজনক কিছু দেখা গেলে দ্রুত তা খতিয়ে দেখার মতো চৌকশ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত উন্নয়ন সহযোগী বিদেশীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সেটি যেন দেশের জন্য আবার ক্ষতি বা চিন্তার কারণ হয়ে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা চাই। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বা করার আশঙ্কা রয়েছে, সে কার্যক্রমের রাশ টেনে ধরতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয়, তার সবই সরকার করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

(বিনিয়োগবার্তা/ ১০ জুলাই ২০১৬)


Comment As:

Comment (0)