দ্বিতীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশের ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার পুনর্বাসন করা ছাড়াও অন্যান্য লক্ষ্য পূরণের জন্য নেয়া হয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। তবে প্রকল্পটি চতুর্থবারের মতো সংশোধন করে মূল প্রকল্প থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ১১ হাজার ১৪২ কোটি টাকায় উন্নীতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া একক গৃহ নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ-২ (চতুর্থ সংশোধিত) প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে তা ২ হাজার ২০৪ কোটি ২০ লাখ, দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, তৃতীয় সংশোধনের মাধ্যমে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা করা হয়েছিল। তবে চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে (প্রস্তাবিত) ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এ প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো—সারা দেশের ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার পুনর্বাসন করা, ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআই শিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ, ৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ, ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ করা ছাড়াও সব প্রকল্প গ্রামে অগভীর ও গভীর নলকূপ স্থাপন ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন মতামতে জানিয়েছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০ বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার সানুগ্রহ নির্দেশনা এবং আংশিক সংশোধিত ডিজাইন মোতাবেক একক গৃহের নির্মাণ মূল্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে চলমান প্রকল্প তালিকায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণতার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বিবেচনায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
জানা গেছে, সম্পূর্ণ জিওবি মূল প্রকল্পটি জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এরপর প্রথম সংশোধিত মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০১৭, দ্বিতীয় সংশোধিত মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০১৯, তৃতীয় সংশোধিত মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০২২। অন্যদিকে চতুর্থ সংশোধিত (প্রস্তাবিত) মেয়াদ করা হচ্ছে জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। দেশব্যাপী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেয়া প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য।
একক গৃহের আংশিক ডিজাইন অনুমোদন, একক গৃহ নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ টাকা হতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করার জন্য প্রকল্পের কাজ জুন ২০২৩-এর মধ্যে সম্পন্নকরণের নির্দেশনা প্রকল্প দলিলে যথাযথভাবে প্রতিফলন করে আরডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০’ অনুসারে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণী এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এরূপ ‘খ’ শ্রেণীর পরিবারসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবার পুনর্বাসন এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত বাস্তবায়নাধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের নিমিত্ত একনেকের সানুগ্রহ বিবেচনা ও সদয় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//