রেলওয়ে

ঈদে নিরাপদ ট্রেন চলাচলে প্যাট্রোলিংসহ চার নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে রেলের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয় চরমে উঠেছে। এমন বিপর্যয় এড়াতে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের ট্রেনযাত্রায় দুর্ঘটনা কিংবা নাশকতা প্রতিরোধে প্যাট্রোলিংসহ চার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে রোববার জারি হওয়া বিশেষ এ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রেলপথ পাহারা, মোটরট্রলির মাধ্যমে টহল, স্থানীয় পর্যায়ে স্টেশন মাস্টারসহ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মীদের রেলপথ নিবিড় তদারকি এবং বিভাগীয় পর্যায়ের রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ট্রেন চলাচল পর্যবেক্ষণে নিবিড় তদারকি।

পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারকে (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) এসব নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। 

রোববার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

আদেশে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সময়ানুবর্তিতার সঙ্গে ট্রেন পরিচালনা করতে হবে। এ সময় যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সার্বক্ষণিকভাবে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, যাত্রী ভোগান্তি ও ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে চারটি নির্দেশনা পালন করা জরুরি বলে নির্দেশনা বলা হয়েছে। 

নির্দেশনা ১: রেলওয়ের রেলপথগুলো (ট্র্যাক) ওয়েম্যান ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে দিন ও রাতে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য প্রতিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত ওয়েম্যান ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মুঠোফোন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশনা ২: প্রয়োজনে মোটর ট্রলি দিয়ে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলীদের অধীনে থাকা কর্মীদের সমন্বয়ে টহল দিতে হবে। নির্দেশনা ৩: স্টেশনমাস্টার, পরিদর্শক ও জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলীরা নিজ নিজ এলাকার রেলওয়ে ট্র্যাক (রেলপথ) সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন এবং তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে অবহিত করবেন। নির্দেশনা ৪: প্রত্যেক বিভাগীয় প্রকৌশলীরা টহল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন। 

রেলওয়ের তথ্যমতে, গত ১০ দিনে রেলওয়ে বড় ধরনের দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। ট্রেন দুর্ঘটনার পরপরই চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের এবং ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও রেলওয়ের শিডিউলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। ১৬ মার্চ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। লাইনচ্যুত কোচগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুটি লাইনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। প্রায় তিনদিনের বেশি সময় ধরে ব্লক নিয়ে ট্রেনগুলো ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হলেও ওই সময়ে রেলের সময়সূচিতে প্রভাব ফেলে। অনেকগুলো ট্রেনের যাত্রাসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

এরপর ১৮ মার্চ রাতে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল ৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি কোচ লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী মোট ১৯টির প্রতিটি ট্রেন বিলম্বিত সময়সূচিতে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

আসন্ন ঈদে বিশেষ ট্রেন চালুর পাশাপাশি সব ধরনের আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সব ট্রেনেই স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হচ্ছে। ট্রেনের নির্ধারিত আসন ছাড়াও অন্তত ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করবে রেলওয়ে। তাই ওই সময়ে দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে হতাহতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

এ কারণে ঈদযাত্রায় ট্রেন চলাচলে সংকটকালীন ট্রেন পরিচালন পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশেষ চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বণিক।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)