রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে লিটন-মিরাজের ব্যাটে বাংলাদেশের দুর্দান্ত লড়াই
ডেস্ক রিপোর্ট: রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে রোববার তৃতীয় দিন ২৬ রানে বাংলাদেশের ৬ উইকেট পতনের পর বুক চিতিয়ে লড়াই করেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ১৬৫ রানের জুটিতে ভর করে ২৬২ রান তুলে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর গোধূলিবেলায় শফিক আব্দুল্লাহ ও নাইটওয়াচম্যান খুররম শাহজাদকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছেন পেসার হাসান মাহমুদ। ২ উইকেটে ৯ রান নিয়ে দিন শেষ করা স্বাগতিকদের লিড এখন ২১ রানের।
পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে অলআউট করার পর শনিবার বিনা উইকেটে ১০ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। ভালো শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও গতকাল সকালে ৯.২ ওভারের এক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড নাজমুল হোসেন শান্তর দল। খুররম শাহজাদ ও মির হামজার আগুনে বোলিংয়ে ২৬ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ভয়ংকর প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে ১৪ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন খুররম। তিনি আউট করেন জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানকে। দিনের শেষ দিকে শিকার করেন মিরাজ ও তাসকিনকে। সব মিলে ৯০ রানে তার শিকার ৬ উইকেট।
এছাড়া মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুলকে শিকারে পরিণত করেন আরেক পেসার মির হামজা। স্পিনার আগা সালমান বাংলাদেশ ইনিংসের শেষটা মুড়িয়েছেন লিটন দাস ও নাহিদ রানাকে একই ওভারে আউট করে।
খুররম ও হামজার গতির আগুনে পুড়ে একটি পর্যায়ে টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে ফলো-অনও। যদিও লিটন ও মিরাজের ব্যাটে সেই লজ্জা এড়াতে পেরেছে টাইগাররা। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ইনিংস ৪৩ রানের। ২০১৮ সালে অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এত কম রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল তেমনটি হয়নি লিটন (১৩৮) ও মিরাজের (৭৮) কল্যাণে। এদিন দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে দেশের বাইরে এক টেস্টে ৫ উইকেট শিকার ও ফিফটি করেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে তিনি ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন। তিনি ছাড়া দুবার এমন কীর্তি আছে সাকিব আল হাসানের। দুটোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। সব মিলিয়ে সাকিব এ কীর্তি গড়েছেন আটবার। মিরাজ করেছেন দুবার।
১৬৫ রানের জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন লিটন ও মিরাজ। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটিটা এখন তাদেরই! এর আগে ৫০ রানের কমে ৬ উইকেট খোয়ানোর পর সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিটা ছিল ১১৫ রানের। সেই রেকর্ডটিও হয়েছিল পাকিস্তানে। ২০০৬ সালে করাচিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে প্রথম ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর সপ্তম উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন আবদুল রাজ্জাক ও কামরান আকমল। ৫০ রানের কমে ৬ উইকেট খোয়ানোর পর সপ্তম উইকেটে আর একবারই ১০০ রানের জুটি দেখা গেছে, ২০২১ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে যা গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এনক্রুমা বোনার ও জশুয়া সিলভা।
গতকাল লিটন করেন চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। এর আগে মিরপুরে ২০২২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৪১, চট্টগ্রামে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৪ ও ক্রাইস্টচার্চে ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র লিটনই একাধিক সেঞ্চুরি করলেন।
খুররমকে এক ওভারে দুই ছক্কা ও একটি চার মারেন লিটন ও মিরাজ। পরের ওভারে (৫২তম) এসেই মিরাজকে শিকারে পরিণত করেন খুররম। ১২৪ বলে ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে সাজঘরের পথ ধরেন মিরাজ। একটু পর তাসকিনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন খুররম।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//