ইইউ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য

ইইউ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্যে ব্রেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব

ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদে ব্রেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে পারস্পরিক আমদানি-রফতানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ব্রেক্সিটের প্রভাবে উভয় পক্ষের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, যা সামনের দিনগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক আরো খারাপ দিকে যেতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলে হয়। খবর ইউরোনিউজ।

ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে গণভোটের আয়োজন করা হয়। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ ত্যাগ করে দেশটি, যা ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত। পরিবর্তিত সম্পর্কের চাপে বেক্সিট-পরবর্তী সময়ে সংকটে পড়ে যুক্তরাজ্য ও ইইউর অর্থনীতি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ব্রেক্সিটের প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে ট্রেড অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (টিসিএ) স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু সম্পর্ক উন্নতির পরিবর্তে এটি অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চলেছে।’ চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ের তুলনায় ২০২১-২৩ সালে উভয় পক্ষের বাণিজ্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বার্মিংহামের এক অর্থনীতিবিদ প্রতিবেদনে বলেন, ‘২০২৩ সালে উভয় পক্ষের বাণিজ্যে আগের বছরগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি কমে গেছে। এতে বোঝা যায়, ব্রেক্সিটের পর অর্থনীতিতে এর প্রভাব স্বল্পমেয়াদি নয়, বরং সামনের দিনগুলোয়ও তা বজায় থাকবে।’

ব্রেক্সিটের পর থেকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে যুক্তরাজ্য। পরে কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়েছে।

অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাসভিত্তিক তথ্যানুযায়ী ইইউতে যুক্তরাজ্যের রফতানি ২৭ শতাংশ ও আমদানি ৩২ শতাংশ কমে গেছে। এ হার ব্রেক্সিট না ঘটলে কেমন হতো, তার সঙ্গে তুলনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। এতে রফতানি ১৭ শতাংশ ও আমদানি ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, টিসিএ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য-ইইউ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে ভোক্তা, মধ্যবর্তী এবং মূলধনি পণ্য আমদানি-রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে কয়েকটি খাতে রফতানি বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তামাক, রেলপথ ও বিমান। এর বিপরীতে খাদ্য, বস্ত্র ও উৎপাদনমুখী শিল্প খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেন, যুক্তরাজ্যের ফলমূল এবং বাদামের রফতানিমূল্য সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়েছে, যা প্রায় ৭৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে গেছে।

ব্রেক্সিট চুক্তিটি ইইউর বাকি দেশগুলোর অর্থনীতিতেও বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য থেকে জার্মানি, স্পেন ও গ্রিসে রফতানি কমে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি ছিল। বেলজিয়াম ও আয়ারল্যান্ডে তুলনামূলক কম হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানি ৫১, জার্মানি থেকে ৩২ ও ফ্রান্স থেকে ২৩ শতাংশ আমদানি কমে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইইউর ছোট অর্থনীতিগুলোয় তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। এসব দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আমদানি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সরকারকে বাণিজ্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও উন্নত করার উপায় খোঁজার তাগিদ দেয়া হয়। এতে ব্রেক্সিট ও টিসিএর কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর প্রভাব কমাতে ইইউর সঙ্গে নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক আলোচনা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুল্ক প্রক্রিয়াগুলো সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্গঠন করে প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তি পরিবর্তন বা পুনরায় আলোচনার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে কিছুটা পরিবর্তনের সুযোগ খোঁজার প্রয়াস নেয়া যেতে পারে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)