ট্রাম্প

ডলার অবমূল্যায়নের পদক্ষেপ নিলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

ডেস্ক রিপোর্ট: বৈদেশিক বাণিজ্যে শুল্ক আরোপের নতুন হুঁশিয়ারি দিলেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার তোপের মুখে পড়েছে ব্রিকস জোটের দেশগুলো। রিপাবলিকান পার্টি থেকে জিতে আসা ট্রাম্পের আশঙ্কা, উদীয়মান অর্থনীতির এ জোট ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে পারে। 

ব্লকটির নয় দেশের বিরুদ্ধে শতভাগ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি জানান, তারা মার্কিন ডলার অবমূল্যায়নের পদক্ষেপ নিলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবেন। খবর: এপি।

ব্রিকস জোটে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এর মধ্যে রাশিয়া, চীন ও ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজনাপূর্ণ। এ জোটে সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করেছে তুরস্ক, আজারবাইজান ও মালয়েশিয়া। এছাড়া যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে আরো কিছু দেশ।

বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ক্ষেত্রে মুদ্রা হিসেবে ডলারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি এবং এ মুদ্রার আধিপত্য কয়েক দশকে অনেকে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। একাধিকবার ব্রিকসভুক্ত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, তারা বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে বিরক্ত।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যানুযায়ী, বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রায় ৫৮ শতাংশই মার্কিন ডলারে সংরক্ষিত এবং জ্বালানি তেলের মতো প্রধান পণ্যগুলো এখনো প্রধানত ডলারে বেচাকেনা হয়। তবে ব্রিকস দেশগুলো ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি এবং ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় বাণিজ্য করার অভিপ্রায় মার্কিন মুদ্রাটির আধিপত্যের প্রতি হুমকি তৈরি করছে। এ প্রক্রিয়া ডি-ডলারাইজেশন নামেও পরিচিত।

পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) অনুসারে, বৈশ্বিক জিডিপিতে ব্রিকস অর্থনীতিগুলোর জিডিপি ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এখানে বসবাস করে বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ। ব্রিকসভুক্ত অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ও জনসংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এর সঙ্গে আরো দেশ যুক্ত হলে সম্মিলিত অর্থনীতির আকার বাড়বে।

শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এ দেশগুলোর কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি চাই, তারা নতুন কোনো ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না বা মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপন করতে অন্য কোনো মুদ্রাকে সমর্থন করবে না। অন্যথায় তারা ১০০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিস্ময়কর অর্থনীতিতে বেচাকেনা করার আশা বাদ দিতে হবে।’

অবশ্য ব্রিকস নিয়ে আশঙ্কার কারণও রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে রাশিয়া। মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়লেও ডলারে বাণিজ্য করতে বেগ পেতে হচ্ছে দেশটিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি সামনে এনেছেন। গত অক্টোবরে ব্রিকস দেশগুলোর এক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্র ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং একে বড় ধরনের ভুল বলে বর্ণনা করেন তিনি।

তখন ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ‘আমরা ডলার ব্যবহার করতে অস্বীকার করছি না। তবে যদি তারা আমাদের কাজ করতে না দেয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য।’

বিশেষ করে রাশিয়া এমন একটি আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা তৈরির জন্য চাপ দিচ্ছে, যা বৈশ্বিক ব্যাংক মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হবে, যা মস্কোকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ও অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য লেনদেন সহজ করবে। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্য হলো, বৈশ্বিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে অন্য কিছু প্রতিস্থাপন করার সুযোগ নেই ব্রিকসের। যারা এ করার চেষ্টা করবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রকে বিদায় জানাতে হবে।

অবশ্য গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের ভূমিকা নিকট ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে না। গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের এক মডেল বলছে, প্রাথমিক বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার ‘স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে নিরাপদ’ এবং এটি অন্যান্য মুদ্রার ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।

দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার আগে শুল্ক আরোপকে প্রচারণায় গুরুত্বের সঙ্গে সামনে এনেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমদানির ক্ষেত্রে সর্বজনীন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিকে সুরক্ষাবাদী অবস্থানে নেয়ার পরিকল্পনা তার। যদিও অর্থনীতিবিদদের বড় একটি অংশের মতামত, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা বিপদে পড়ে যাবেন। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে নতুন চাপ তৈরি হতে পারে।

আগামী মাসে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগেই তিনি বাণিজ্য বিষয়ে নীতিনির্ধারণ শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘২০ জানুয়ারি আমার অনেক প্রথম নির্বাহী আদেশের মধ্যে একটি হিসেবে আমি মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সব নথিতে স্বাক্ষর করব এবং তাদের হাস্যকর উন্মুক্ত সীমান্ত বন্ধ করব।’

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)