ছেলেকে শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন
ডেস্ক রিপোর্ট: ছেলে হান্টারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া হান্টারের সাজার ঘটনাকে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালতের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার (১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘আজ, আমি আমার ছেলে হান্টারের জন্য ক্ষমার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছি। তাকে নিঃশর্তভাবে সম্পূর্ণ ক্ষমা করা হল। তার মামলার তথ্য যাচাই করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, শুধু আমার ছেলে হওয়ার কারণে তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। আর এটা ভুল।’
বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত মার্কিন বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটল, যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) প্রধানকে নিজেই মনোনীত করেছেন। বিচার বিভাগেও তিনি নিজেই নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন।
চলতি বছর বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হান্টার বাইডেন। এ মাসেই আদালতে তার শাস্তি ঘোষণার কথা ছিল।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করার ফলে আদালত হান্টার বাইডেনকে তার ওই অপরাধের জন্য শাস্তি দেবে না। সাজা ঘোষণা হলে তাকে হয়ত জেলে যেতে হত, এখন আর তা হবে না।
আগামী ১২ ডিসেম্বর অস্ত্র মামলায় এবং ১৬ ডিসেম্বর কর ফাঁকির মামলায় আদালতে হান্টার বাইডেনের সাজা ঘোষণার কথা ছিল। বিচারক এখন সেই শুনানির তারিখ বাতিল করে দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে শাস্তি মওকুফের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনি চাইলে যে কারো দণ্ড মওকুফ করে দিতে পারেন। এক মাস ২০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে পারবেন না।
এদিকে ছেলেকে ক্ষমা করে জো বাইডেন তার একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে বাদ পড়ার আগে ও পরে তিনি বারবার বলেছিলেন, হান্টারকে নির্বাহী আদেশে ক্ষমা করার পথে তিনি হাঁটবেন না।
এমনকি নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পরও প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করা বা সাজা কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।
কিন্তু বাইডেন শেষ পর্যন্ত যে ক্ষমার ঘোষণায় সই করেছেন, সেখানে কেবল ওই দুই মামলা থেকেই নয়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সম্ভাব্য যে কোনো ফেডারেল অপরাধের শাস্তি থেকে হান্টার বাইডেনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, ওই সময়টায় ইউক্রেনীয় গ্যাস কোম্পানি বুরিসমারের পর্ষদে বাইডেনপুত্রের দায়িত্বপালন এবং চীনসহ অন্যান্য বিদেশি কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার জন্য তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত আর করা যাবে না।
বিতর্কিত বিদেশি ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য তদন্তের মুখে ছিলেন হান্টার বাইডেন। আর ট্রাম্প বারবার বলে আসছিলেন, ওইসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
ক্ষমার ঘোষণায় জো বাইডেন বলেছেন, তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ, তার ছেলে হওয়ার কারণেই হান্টারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং তিনি ‘ন্যায়বিচার পাননি’। একই ধরনের অভিযোগে অন্যদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, হান্টারের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো ঘটেছে ‘অন্যভাবে’।
বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসে তার ছেলের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এগিয়ে নিয়েছে কেবল তাকে ‘আক্রমণ’ করার জন্য এবং তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য।
বিবিসি জানিয়েছে, বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত ডেমোক্রেটিক শিবিরে বিভক্তি তৈরি করেছে। দলের নেতাদের কেউ কেউ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত, তাদের মতে হান্টার বাইডেনের বিচার ছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যায্য’। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রেসিডেন্ট নিজের ছেলেকে ক্ষমা করে একটি বাজে নজির গড়লেন।
কলোরাডোর গভর্নর জ্যারেড পলিস এক্স-এ লিখেছেন, ‘একজন বাবা হিসাবে আমি বুঝতে পারি, ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়ে বাইডেন তাকে সাহায্য করতে চেয়েছেন, আর সেটা সহজাত। কিন্তু তিনি তার পরিবারকে দেশের চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন, সে কারণে আমি হতাশ। এটা এমন একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল, পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা যার অপব্যবহার করার সুযোগ পাবেন এবং দুঃখজনকভাবে তার (বাইডেনের) সুনাম নষ্ট করবে।’
অন্যদিকে রিপাবলিকান শিবির প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছে।
প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য মার্জোরি টেইলর-গ্রিন বলেছেন, ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাইডেন স্বীকার করে নিলেন যে হান্টার একজন ‘অপরাধী’ এবং তিনি নিজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন ‘মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড’।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে এর আগেও এমন ক্ষমা প্রদর্শনের উদাহরণ রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কোকেন–সংক্রান্ত মামলায় তার সৎভাইকে ক্ষমা করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার আগের মেয়াদে কর ফাঁকির মামলায় বেয়াইকে ক্ষমা করেন। তারা সবাই কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে কর ফাঁকির মামলায় হান্টার বাইডেনের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া বন্দুক–সংক্রান্ত আলাদা মামলায় তার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//