বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত বিমানবন্দর-গাজীপুর বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালু হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর। বাস চলাচলের জন্য তৈরি করা বিশেষায়িত বিআরটি লেনে আপাতত পরিষেবা দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এ পথে সংস্থাটি দুটি বাস পরিচালনা করবে। গাজীপুরে প্রকল্পটি পরিদর্শনে গিয়ে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এ ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহছানুল হক।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। একইভাবে বোর্ডবাজার পর্যন্ত ৩৫, টঙ্গী কলেজ গেট পর্যন্ত ৫০ ও বিমানবন্দর পর্যন্ত ৭০ টাকা বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিরতি পথে বিমানবন্দর থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ২৫ টাকা, বোর্ডবাজার ৪০, চৌরাস্তা ৫৫ ও শিববাড়ী ৭০ টাকা।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিআরটি লেন বাসের জন্য বিশেষায়িত হলেও আপাতত প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট যানবাহনও সেখানে চলতে পারবে। এজন্য এসব যানবাহন থেকে কোনো ধরনের টোল আদায় করা হবে না।
শিববাড়ী বিআরটি স্টেশন পরিদর্শনের পর এক আলোচনা সভায় মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহছানুল হক বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বহুদিন ধরে মানুষ এর প্রতীক্ষায়। এর একটা অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে দুটি এসি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী পরিবহন করা হবে। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন। সড়কটি চালু হলেও বেশকিছু সমস্যা থেকে যাবে। একদিনেই সেসব সমস্যার সমাধান হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ মুহূর্তে সড়কের প্রতিটি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যা মানুষ পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হবে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এ প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দুটি বাস পরিচালনা করছি। কিন্তু বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে বাসগুলো এখন গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচল করবে।’
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘প্রকল্পটি কবে চালু হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল। স্বল্প পরিসরে হলেও আমরা ১৬ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করতে পারছি। শুরু হলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে, সেগুলো ধীরে ধীরে সমাধানের চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত প্রকল্পগুলোর একটি গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি। শুরু থেকেই নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট যানজট, জলাবদ্ধতায় অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে এসেছে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। এ কষ্ট দীর্ঘ হয়েছে নির্মাণকাজের ধীরগতিতে। গার্ডার ধস, ক্রেন ছিঁড়ে চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর পড়া, ঠিকাদারের অদক্ষতাসহ নানা কারণে এ প্রকল্প বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। প্রকল্পটির অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১২ সালে। নকশা আর দরপত্রের কাজ শেষ করতেই চলে যায় পরের চার বছর। ২০১৭ সালে শুরু হয় পূর্ত কাজ, যা এখনো চলমান। করিডোরটির কাজ বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
বিআরটি প্রকল্প ১৬ ডিসেম্বর চালুর বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ করিডোরে কোম্পানির নিজস্ব বাস চলবে। এজন্য আমরা অত্যাধুনিক বাস সংগ্রহ করছি। বাসগুলো এখনো কোম্পানির বহরে যুক্ত হয়নি। আপাতত করিডোরে যাত্রীসেবা দেবে বিআরটিসির দুটি বাস। আমরা আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানির মাধ্যমে বিআরটি পুরোপুরি চালু করা হবে।’
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//