ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

প্রথম দিন যেসব নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অভিবাসন ইস্যু। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে পেন্টাগনের সম্পদ ব্যবহারের জন্য দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রধান পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এসব আদেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের করে নেয়া, ফেডারেল চাকরির নিয়োগ স্থগিত করা, ফেডারেল কর্মকর্তাদের অফিসে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়াসহ আরো অনেককিছু। ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে দাঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধে অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেয়ার আদেশে সই করেছেন। পাশাপাশি টিকটক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত ও আমেরিকার অভিবাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছেন। ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের পর ভাষণে বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আমরা আমেরিকার সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার ও সাধারণ জ্ঞানের বিপ্লব শুরু করব আমেরিকার সোনালী যুগ এখনই শুরু হচ্ছে।’

২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় পদক্ষেপগুলোর প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রথম মেয়াদের পরিকল্পনা যেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে না ও কিছু বড় পদক্ষেপ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দিনে ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে কিছু আদেশ সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গা

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর প্রথম যে পদক্ষেপের ঘোষণা করেন তা হলো ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ অভিযুক্তকে ক্ষমা করা। তিনি জানান, প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে পূর্ণ ক্ষমা প্রদান করা হবে। এতে অধিকাংশ মামলার সমাপ্তি ঘটাবে। ১৪ জনের সাজা কমিয়ে শুধু কারাগারে অতিবাহিত সময় গণনা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাউড বয়েজ ও ওথ কিপারস গ্রুপের নেতারাও অন্তর্ভুক্ত।

টিকটক নিষেধাজ্ঞায় বিলম্ব

টিকটক নিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। আদেশটির মাধ্যমে চীনা মালিকানাধীন এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি নিষিদ্ধ করার আইনের কার্যকরণ স্থগিত করা হয়েছে। ট্রাম্প আগে টিকটককে নিষিদ্ধ করার পক্ষেই ছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় টিকটকে তার ভিডিওগুলো কোটি কোটি বার দেখা হয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে নতুন মালিক খুঁজে বের করার জন্য সময়সীমা ৭৫ দিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তা না করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে মাধ্যমটি।

বাইডেন আমলের নির্দেশ পাল্টাচ্ছে

ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলো বাইডেন তার প্রশাসনের প্রথম দিনেই সই করেছিলেন। বাতিল করা আদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গবৈষম্যবিরোধী সুরক্ষা সম্প্রসারণ, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার অনুমতি, ব্যক্তিগত কারাগারের চুক্তি নবীকরণের নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

অভিবাসন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অভিবাসন ইস্যু। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে পেন্টাগনের সম্পদ ব্যবহারের জন্য দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি। তিনি এমন একটি অ্যাপও বন্ধ করে দিয়েছেন যা অভিবাসীদের প্রবেশের ও আশ্রয় দাবি করার অভিপ্রায় সম্পর্কে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বা অস্থায়ী কর্মী, ছাত্র বা পর্যটন ভিসাধারী ব্যক্তির সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আদেশ সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বেরিয়ে আসার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এমন আলোচনা আগে থেকেই ছিল। ট্রাম্প বলেছেন, ‘ওহ, এটা ছিল আমাদের একটা বড় পদক্ষেপ।’

কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনই তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি।

পরিবেশ ও জ্বালানি

সোমবার ট্রাম্প আবারো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করতে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এই চুক্তিতে প্রায় ২০০টি দেশ সই করে, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সম্ভব হলে দেড় ডিগ্রির নিচে রাখা। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুনরায় চুক্তিতে যোগ করেছিলেন। ট্রাম্প একটি ‘জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করার ও পরিবেশগত নিয়ম সহজতর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার প্রশাসনের মত হচ্ছে- এর মাধ্যমে জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর অযৌক্তিক বোঝা সৃষ্টি করবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)