ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে সম্মত চীন
ডেস্ক রিপোর্ট: চীনের কাছ থেকে অগ্রাধিকারমূলক ক্রেতা-ঋণ এবং সরকারি রেয়াত-ঋণ নামে দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। ওই ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে সম্মত হয়েছে চীন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-য়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সম্মতি পাওয়া গেছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে গেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। মঙ্গলবার তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে নীতিগতভাবে সম্মত হন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ের দিয়াওইউতাই স্টেট গেস্ট হাউসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে তৌহিদ হোসেন চীনকে অগ্রাধিকারমূলক ঋণ ও সরকারি ছাড়কৃত ঋণের জন্য সুদের হার দুই-তিন শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার অনুরোধ জানান। সেইসঙ্গে কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার মাশুল) মওকুফ করতে ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোরও অনুরোধ করেন।
এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুদের হার কমানোর অনুরোধ বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ২০২৬ সালে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশি পণ্যের ডিএফকিউএফ (শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত মার্কেট অ্যাক্সেস) প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন তিনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অনুরোধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় চীনের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবকেও স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শিক্ষা, রেলওয়ে, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুসম্পদ, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সবুজ অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন চীনের মন্ত্রী।
বৈঠকে উভয় দেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। আলোচনা শুরুর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৌহিদ হোসেনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ ও সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকে ওয়াও ই বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি দেশের সভ্যতা ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং তার সরকার বাংলাদেশের জন্য অনেক বাস্তবিক কাজ করছে।
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানকার স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগকে তার দেশ সমর্থন করে।
চীন তাদের নিজেদের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (সিডকা) চেয়ারম্যান লাও ঝাওহুইয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
পরে বেইজিং থেকে সাংহাই যাবেন। সেখানে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) একটি আলোচনায় অংশ নেবেন তৌহিদ হোসেন। পাশাপাশি উপদেষ্টা সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোটিক্স ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক তিনটি কারখানা পরিদর্শনে যাবেন।
আগামী ২৪ জানুয়ারি উপদেষ্টার চীন সফর শেষ হবে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//