শেষ হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর
নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্দা নামলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরের। মেলার শুরু থেকেই মানহীন পণ্য, সড়ক আটকিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পাড়াপাড়ে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা, নির্মাণাধীন বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি, ক্রেতাদের সাথে অসদাচরণ, ব্যবসায়ীদের মাঝে মারামারি সহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ মাথায় নিয়েই চলছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর।
এসব অভিযোগ সাথে নিয়েও ব্যবসা ব্যবসা সফল এবারের মেলা। অতিতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের মেলাকে আরো প্রাণবন্ত করতে কাজ করবে মেলার আয়োজক কমিটি ইপিবি'র।
শুক্রবার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান অতিথিরা।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে নির্ধারিত সময় ১লা জানুয়ারী শুরু হয়ে ৩১শে জানুয়ারী ১ মাসব্যাপী চলে এবারে মেলা। মেলার শুরু থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উৎসাহ উদ্দিপনার যেনো শেষ নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাক-ডাকে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল সরগরম। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের সমাগম অতিতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিশু-নারী-পুরুষ সহ সব বয়সের ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অংশ গ্রহণ ছিল রেকর্ড সংখ্যক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গণের ক্রেতার দর্শনার্থীদের আগমনও ছিল লক্ষ্যনীয়।
মেলায় অংশ গ্রহণ করা বড়সর কোম্পানি গুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় অংশ গ্রহণ আসলে পন্য বিক্রয়ই মূল উদ্দেশ্য না। ১ মাস জুড়ে দেশি-বিদেশি লাখ লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলা পরিদর্শনে আসেন। বিভিন্ন পণ্য দেখে মান ও দাম যাচাই করে পন্য ক্রয় করেন আবার অনেকে কারখানা থেকে পণ্য সরবরাহ করতে ক্রয়াদেশ দেন।
সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের দেশিয় প্রযুক্তির পণ্যের যতো প্রসার ঘটবে ততোই আমাদের দেশ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে একটা দাবি থাকবে যেন আগামী মেলায় বিদেশী কোম্পানি ও বিক্রেতাদের অংশ গ্রহন থাকে এবারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। মেলায় যত বেশি, বিদেশিদের অংশ গ্রহণ থাকবে ততো মেলা ব্যবসা সফল হবে।
মেলায় আগত সমাজকর্মী, বাংলাদেশ কলামিস্ট ফোরামের মহাসচিব লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, এবারের মেলা ছিল অতিতের চেয়ে অনেকটা সাজানো গোছানো। এ মেলায় বাংলাদেশ সহ মাত্র ৮টি দেশ অংশ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় বিদেশীদের অংশ গ্রহণ ছিল কম। এটা আরো বাড়াতে হবে। আগামী মেলায় বিদেশি কোম্পানি ও বিক্রেতাদের অংশ গ্রহণ যত বাড়বে দেশের পণ্যের বাজার ততোই প্রসারিত হবে আর ততই মেলা সফল হবে। তাছাড়া মেলার পাশের গাজীপুর-মদনপুর বাইপাস সড়কে আন্ডার পাস বা ওভার পাস করা খুবই জরুরি। এবার মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জ্যামযটে অনেকটাই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আশা করি বিষয়গুলো মাথায় রেখে আগামী মেলার আয়োজন করবে মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেলায় অংশ গ্রহণ করা দেশিয় উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলার শুরুর দিকে বৈরি আবহাওয়া ও শীতের কারণে মেলার ক্রেতা-দর্শনার্থী কম ছিল। তখন মেলার লোকসানের আশংকা করলেও যতো দিন বেড়েছে ততোই আমরা সফলতার দেখা পেয়েছি। বিগত মেলার চেয়ে এবার আরো ভালো বিক্রয় হয়েছে। তবে মেলায় আসার একমাত্র বাইপাস সড়কে সংস্কারের কাজ চলমান থাকায় দীর্ঘ জ্যামযট লেগেই ছিল। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্যেও জ্যামযটে ভোগান্তির ভয়ে অনেকেই পরিবার নিয়ে আসতে পারেনি। পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় জ্যামযট একটি বড় সমস্যা। আশা করি আগামীনে মেলার আয়োজকরা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নেবে।
মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বলছেন, ২৯ বছরেও আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় আন্তর্জাতিক মানের পণ্য থাকবে বেশি। অথচ বাংলাদেশ ছাড়া এবারের মেলায় মোট ৭টি দেশ অংশ গ্রহণ করে। আর এ মেলায় প্রতিবছরই মানহীন কিছু পণ্য বিক্রেতাদের কাছে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। যা দেখে মেলায় আসা ক্রেতা-দশনার্থীদের হতাশ করে। ওই সব স্টল গুলোতে যে সব পণ্য সামগ্রিক পাওয়া যায় তা খুবই নিন্মমানের। দেইখা লন ১০০, বাইচা লন ১০০ এমন নিন্মমানের পণ্য সামগ্রির বিক্রেতারের হাক ডাকে মেলার ক্রেতা-দর্শনাথীদের বিভ্রত্ব করে বলে অভিযান ক্রেতাদের।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, এবারের মেলায় যা ভুলত্রুটি ছিল তার থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩০তম আসর সাজানো হবে। ১৯৯৫ সাল থেকে আয়োজিত এই মেলা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের মেলার শেষ দিনেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভির ছিল। মোটকথা এবারের মেলা অতিতের চেয়ে ব্যবসা সফল ও সার্থক হয়েছে।
ইপিবি'র ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের মেলায় দেশি বিদেশি ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করেছে। মেলায় বিক্রয়ের শীর্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ১ম পুরস্কার, ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২য় পুরস্কার ও ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩য় পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী-বিক্রেতাদের সতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণই মেলাকে প্রানবন্ত ও সার্থক করে তুলেছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//