দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত বেলাব সাব রেজিষ্ট্রি অফিস
নরসিংদী প্রতিনিধি, বিনিয়োগবার্তা: বিভিন্ন অনিময় এবং দুর্নীতিই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বেলাব সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। ফলে কার্যালটি দিন দিন দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসকল অনিয়মের বেড়াজালে পড়ে দলিল গ্রাহকরা পড়ছেন নানা বিপাকে এবং তাদের পকেট থেকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলিল রেজিষ্ট্রির ক্ষেত্রে দলিল গ্রাহক সরকারের নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে দলিলের সাথে তা সংযুক্ত করে রেজিষ্ট্রির জন্য তা অফিসে জমা দিবে। সে মাফিক সাব রেজিষ্ট্রার কাগজ পত্র দেখে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে দলিল রেজিষ্ট্রি করবেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দেবার পরও দলিল গ্রাহকে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। দলিল গ্রাহককে প্রথমে প্রতি দলিলের সেরেস্তা বাবদ দিতে হয় ৩৫০০ টাকা। তারপর দলিলের মূল্যেও উপর প্রতি লাখে দিতে হয় ৩ শত টাকা করে। সেক্ষেত্রে একটি দলিলের মূল্য ১০ লাখ টাকা হলে তাকে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা গুনতে হয়। আর এই সকল টাকা লেনদেন হয় অফিসের নকলবিশ জাকারিয়ার হাত দিয়ে। জাকারিয়া সেরেস্তার ৩৫০০ টাকা এবং লাখ প্রতি ৩০০ টাকা বুঝে পেয়ে দলিলের এক কোনায় একটি সংকেত চিহৃ দিয়ে দিলে সাব রেজিষ্ট্রার তা বুঝে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। সেরেস্তার ৩৫০০ টাকা দলিল লেখক সমিতির আণ্ডারে গিয়ে তার কিছু অংশ অফিসের বিভিন্ন খরচে ব্যয় করা হয়। বাকী অংশ চলে যায় সমিতির নেতৃবৃন্দের পকেটে। লাখের ৩০০ টাকার হিসেবের অংক চলে যায় সাব রেজিষ্ট্রারের পকেটে। অফিসের কার্যক্রম সপ্তাহে ৫ দিন চলার নিয়ম থাকলেও এখানে দলিল রেজিষ্ট্রি হয় শুধু মাত্র বুধ এবং বৃহস্পতি বার। কোন দলিলের নকল তুলতে ৩০০ টাকা দেবার বিধান থাকলেও এখানে নকল তুলতে গেলে একজন দলিল গ্রাহককে দিতে হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল রেজিষ্ট্রি করতে আসা একজন দলিল গ্রাহক জানান, আমি একটি দলিল করতে আমার দলিল লেখককে নিয়ে অফিসে এলে, আমার দলিল লেখক আমাকে সেরেস্তার জন্য ৩৫০০ টাকা এবং আমার দলিলের মূল্য ১২ লাখ টাকা বিধায় আরো ৩৬০০ টাকা দিতে বলে । আমি সেই মোতাবেক ৭১০০ টাকা তার হাতে দিলে সে অফিসের একজন কেরানি গোছের লোকের হাতে দলিল সমেত সেই টাকা দেয়। তিনি প্রথমে টাকা গুণে তা রেখে দেন পরে দলিলটি দেখে শুনে কিছু কিছু জায়গায় পেন্সিল দিয়ে মার্ক করে দেন। সবার শেষে দেখলাম তিনি দলিলের এক কোণায় একটি সংকেত চিহৃ ব্যবহার করে তা সাব রেজিষ্ট্রিারের কাছে পেশ করলেন। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কেণ এই প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আজ দলিল রেজিষ্ট্রি হবে ঠিক কিন্তু আমি কাগজ পত্র পাব এক দেড় বছর পর। এর মধ্যে যদি আমার দলিল বাতিল করে দেয় তখন আমার কিছু করার থাকবেনা।
এ বিষয়ে বেলাব সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মানিকের সাথে কথা বললে তিনি এসকল বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি সেরেস্তা নামক শব্দটি কি- তা প্রথমে না বুঝলেও পরে বলেন ‘আমি জানি আমরা দলিল লেখকরা যেখানে বসি সেটাই সেরেস্তা।’ সেরেস্তা খাতে কোনো টাকা নেয়া হয় না এবং লাখের ৩০০ টাকার বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করেন।
বেলাব সাব রেজিষ্টার শাহাদাত আলী মোল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে পে অর্ডার করে তা জমা দিলেই এখানে দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। এছাড়া অন্য কোন খাতে এখানে কোন টাকা নেয়া হয়না।
(এসএইচআর, এসএএম, ২০১৭)