নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি-মর্টার শেল ও আগুনে জ্বলছে রাখাইন রাজ্য
বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
রোহিঙ্গাদের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা ভিশন বলছে, রোববার রাখাইনের মংডুতে হেলিকপ্টার থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রামে নির্বিচারে মর্টার শেল ও গুলি ছুড়ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বেশ কিছু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রোববার মংডুর হ্যাইনডাফারায় রোহিঙ্গাদের একটি মার্কেটে অন্তত পাঁচ রোহিঙ্গাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গ্রামের পুরো মার্কেট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আহত হয়েছে সাতজন।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইনের সব গ্রামবাসীরাই বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। তারা যা করছে, তা বিপ্লবের মতো। তারা মৃত্যুর তোয়াক্কা করছে না।
দেশটির সরকার বলেছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে কমপক্ষে ৪ হাজার অমুসলিম গ্রামবাসীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, ব্যাপক সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে প্রাণ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু পালানোর সময়ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি নিক্ষেপ করছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। বাংলাদেশ সীমান্তের রাখাইনে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
গত শুক্রবার মিয়ানমার পুলিশের ৩১টি চেকপোস্টে একযোগে হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ জনে। নিহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছে। আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে বিভক্তকারী নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। এই রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
মিয়ানমার সীমান্ত থেকে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা জানান, রোববার তারা সীমান্তের মিয়ানমার অংশে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। দুই দেশের মাঝে ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’র দিকে যাওয়ার চেষ্টার সময় রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারী উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের একটি হামলার ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একই ধরনের হামলাকে কেন্দ্র করে নাটকীয় রূপ নিয়েছে রাখাইনের সহিংসতা।
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের এই হামলার পর নৃশংস অভিযান পরিচালনা করছে দেশটির সেনাবাহিনী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ এনেছে।
রাখাইনে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক হামলার পরিসর বড় ছিল। এতে মনে হচ্ছে যে রোহিঙ্গারা সেখানে একটি আন্দোলন অথবা অভ্যুত্থানের পথে হাঁটছেন।
রাখাইনের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলছে, ‘সব গ্রামবাসীরাই বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। তারা যা করছে, তা বিপ্লবের মতো। তারা মৃত্যুর তোয়াক্কা করছে না। আমরা বলতে পারি না যে তাদের মধ্যে কারা বিদ্রোহী।’
রাখাইনের ১১ লাখ রোহিঙ্গা শান্তির নোবেল জয়ী অং সান সু চির ১৬ মাসের প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস নিপীড়ন ও তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে সু চির বিরুদ্ধে।
গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনের সহিংসতার পর বাংলাদেশে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ঢুকে পড়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নাফ নদীতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে আসা রোহিঙ্গাদেরকে তারা খাবার দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না তাদের।
৬১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আমির হোসেন বলেন, দয়া করে আমাদের বাঁচান। তার এই আকুতির সময় শিশুরা আশ-পাশে কান্না করছিল। ‘আমরা এখানে থাকতে চাই, নতুবা আমাদেরকে হত্যা করা হবে।’
সূত্র : রয়টার্স, রোহিঙ্গা ভিশন।
(এসএএম/ ২৭ আগস্ট ২০১৭)