জ্ঞান অর্জন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবে: ড. আব্দুর রাজ্জাক
প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: পুঁজিবাজার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজায় আয়োজিত বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০১৭ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ক্যাপিটাল মার্কেটের সাথে জড়িতদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। বিদেশে আমরা দেখেছি ক্যাপিটাল মার্কেটে অনেক প্রফেসর বিনিয়োগ করে। তারা রাত দিন এ বিষয়ে পড়াশোনা করে, অভিজ্ঞতা নেয়।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক এ মেলার আয়োজন করে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে মানুষের মাঝে নানান ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষত এটি একটি অনাস্থার জায়গা। তবে বাজার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ পরবর্তী ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যে বিপর্যয় ঘটেছে তা মানুষের মাঝে যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটি এখনো কেটে উঠেনি। অনেকেই নতুন করে পুঁজিবাজারে আসছে না। এজন্য এ বাজারের যে প্রবৃদ্ধি হবার কথা ছিল তা হয়নি।
একটি উদাহরণ দিয়ে রাজ্জাক বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন নোবেল বিজয়ী মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, তুমি যদি জীবনে ব্যাংক গ্রাফ হতে চাও তোমার জন্য তিনটি সুযোগ আছে। একটি হল তুমি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পার। দ্বিতীয় হল এগ্রোতে বিনিয়োগ করতে পার। তৃতীয় হল তুমি একটি সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে কর আর একটি পুরনো গাড়ি ক্রয় কর। সেজন্য পুঁজিবাজার শুধু আমাদের দেশে নয় সারা পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ। এটা সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, ২০০৮, ২০০৯ সালে সারা পৃথিবীতে তিনটি সমস্যা সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশে তা হয়নি। বর্তমান সরকারের ৯ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে স্থিতিশীল বলা হচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে গতবছর ৭.২ হয়েছে। আগামী বছর আশা করছি ৭.৪ বা তার চেয়ে বেশি হবে। এ অর্জনের পেছনে ক্যাপিটাল মার্কেটের অবদান রয়েছে।
রাজ্জাক বলেন, ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমাদের পুঁজিবাজার অনেক ভালো ছিল। ২০১০ সালে এসে আমাদের বড় বেশি হতাশ করেছে। কিন্তু সরকার পুঁজিবাজারের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা ফাইন্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট করে দিয়েছি।
পুঁজিবাজারের জন্য কতগুলো জিনিস করা দরকার যা হয়ে উঠেনি উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদেশি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে বাধ্যবাধকতা নেই, তা দরকার। তাদের ম্যান্ডেটরি না যে পুঁজিবাজারে আসতে হবে যা ভারতেও রয়েছে। এরপর যেসব কোম্পানি এসেছে তাদের শেয়ার ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু পুঁজি সৃষ্টি করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারের গ্রোথ অনেক বেশি হতে পারতো। কিন্তু ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি হওয়ায় তা হচ্ছে না। ইন্টারেস্ট রেট ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ হতে পারে না, পৃথিবীর কোথাও এত বেশি ইন্টারেস্ট নেই। ইতোমধ্যে কিছুটা কমে এসেছে। বাজারে কিছুটা পুঁজি আসায় ইন্টারেস্ট কিছুটা কমেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নিয়ন্ত্রণ বা ভূমিকা নেই।
ব্যাংকের সমালোচনা করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের আয় অনেক বেশি। ব্যাংক শুধু আমানত আর ইন্টারেস্টের জায়গা নয়। ব্যাংক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানও। সরকারি ব্যাংক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিলেও বেসরকারি ব্যাংক এ ঋণ দেয় না। তারা শুধু বড় বড় কোম্পানিকে ঋণ দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হল ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রোথ আনা। এজন্য পুঁজিবাজার দরকার। ছোট বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বাড়াতে, কোম্পানি করতে পুঁজিবাজার দরকার। আমাদের দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের গ্রোথ এখনো ৩২ শতাংশ। সার্ভিস খাতের গ্রোথ অনেক বেশি তা কমে আসা উচিত। শিক্ষিত বেকারদের চাকরি ব্যবস্থা করতে হলে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে গ্রোথ বাড়াতে হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে পুঁজিবাজার অবদান রাখতে পারে।