সার্কিট ব্রেকার (Circuit breaker) কী?

বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা:  সাধারনত সার্কিট ব্রেকার হচ্ছে -স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এমন একটি ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল সুইচ যা ওভারলোড বা শর্ট সার্কিটের ক্ষতিকর প্রভাব হতে লোড বা সরবরাহ লাইনকে রক্ষা করার জন্য কোন ত্রুটিযুক্ত সার্কিটে পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। এর মৌলিক কাজ হচ্ছে ত্রুটি শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া।

আর পুঁজিবাজারে সার্কিট ব্রেকার হচ্ছে একদিনে শেয়ারের দর পরিবর্তনের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য সীমা। শেয়ার বা সিকিউরিটিজের কেনা-বেচার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত দাম এই সীমার বাইরে চলে গেলে কেনা বা বেচার ওই আদেশ কার্যকর হয় না। ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে সার্কিট ভেঙ্গে গেলে যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনই পুঁজিবাজারে মূল্য পরিবর্তন-সীমা অতিক্রম করলে লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়ে। তাই একে সার্কিট ব্রেকার বলা হয়।

বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্কিট ব্রেকার বা দর পরিবর্তনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ। অর্থাৎ একদিনে একটি শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। একইভাবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমতে পারে। তবে শেয়ারের দর ভেদে মূল্য পরিবর্তনসীমার ৬ টি ধাপ আছে। এগুলো হচ্ছে-৩.৭৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৬.২৫ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ, ৮.৭৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ।

২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২০ শতাংশ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সূচিত ধসের পর থেকে বাজারে শেয়ারের বড় দর পতন হতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বড় দর পতন ঠেকাতে সার্কিট ব্রেকারের সীমা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। চালু করা হয় নতুন সীমা। এতে কম দামের শেয়ারে দর পরিবর্তনের বেশি সুযোগ এবং দামি শেয়ারের ক্ষেত্রে দর পরিবর্তনের কম সুযোগ রাখা হয়।

বর্তমান সার্কিট ব্রেকার অনুসারে বাজারে কোন শেয়ারের দর ২০০ টাকার কম হলে একদিনে ওই শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে বা কমতে পারবে। তবে দর হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ কোনভাবেই সাড়ে ১৭ টাকার বেশি হতে পারবে না। একইভাবে শেয়ারের বাজার মূল্য ২০১ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হলে ৮.৭৫ শতাংশ বা ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা,৫০১ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মূল্যের শেয়ারের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ বা ৬২ টাকা ৫০ পয়সা,১০০১ টাকা থেকে ২০০০ টাকা মূল্যের শেয়ারের ক্ষেত্রে ৬.২৫ শতাংশ বা ১০০ টাকা,২০০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত ৫ শতাংশ বা ১৮২ টাকা ৫০ পয়সা এবং ৫০০০ টাকার বেশি মূল্যের শেয়ারের ক্ষেত্রে একদিনে ৩.৭৫ শতাংশ বা ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে বা কমতে পারবে।

সেকেন্ডারি এবং প্রাইমারি মার্কেটের (আইপিও) জন্য নতুন সার্কিট ব্রেকার:

সেকেন্ডারি এবং প্রাইমারি মার্কেটের (আইপিও) জন্য নতুন সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এ বিষয়ে এক নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সার্কিট ব্রেকার দেওয়ার জন্য ঢাকা এবং চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার দর ২০০ টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ যেসব সিকিউরিটিজের দর ২০০ টাকা পর্যন্ত সেগুলোর দর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে বা কমতে পারবে। এছাড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত যেসব সিকিউরিটিজের দর রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার শেয়ার দরের কোম্পানিগুলোর জন্য সার্কিট ব্রেকার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া ১০০০-২০০০ পর্যন্ত ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার ৫ শতাংশ কার্যকর হবে। যেসব শেয়ার দর ৫০০০ টাকার ঊর্ধ্বে সেগুলোর জন্য সার্কিট ব্রেকার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ কার্যকর হবে।

এদিকে প্রাইমারি মার্কেট থেকে অর্থাৎ আইপিও’র কোম্পানির স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের প্রথম দিনে ৫০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় দিনে সার্কিট ব্রেকার হবে আগের দিনের শেয়ার দরের ৫০ শতাংশ। তৃতীয় দিন থেকে ‍পুঁজিবাজারের অন্যান্য কোম্পানির মতো সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন:

এদিকে পুঁজিবাজারে স্মরণকালের তীব্রতম দরপতনের ধারা ঠেকাতে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে নিজেরা অতি কম দামে শেয়ার বিক্রি করে আতঙ্ক বাড়াতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন করে সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকানো এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা, তীব্র আতঙ্ক থেকে তাদেরে বের করে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সার্কিট ব্রেকারে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সার্কিট ব্রেকারে প্রতিটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের গত ৫ কার্যদিবসের গড় মূল্যকে সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য সীমা ধরা হবে। এর কম দাম প্রস্তাব করা হলে ওই ক্রয় আদেশ আর কার্যকর হবে না।

ধরা যাক, গত ৫ কার্যদিবসে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) এর শেয়ারের গড় মূল্য ছিল ৭ টাকা। অন্যদিকে গতকাল বুধবার শেয়ারটির ক্লোজিং মূল্য ছিল ৬ টাকা ৬০ পয়সা, আর সর্বশেষ মূল্য ছিল ৬ টাকা ৫০ পয়সা।

আজকে থেকে এনবিলের শেয়ারে কোনো ক্রয় আদেশ ৭ টাকা বা তার বেশি না হলে সেটি কার্যকর হবে না। অর্থাৎ ৭ টাকার নিচে এই শেয়ার লেনদেনের কোনো সুযোগ থাকবে না।

শেয়ারের মূল্য যাতে আর কমতে না পারে, বিনিয়োগারীরা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে লক্ষ্যে সার্কিট ব্রেকারে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

(এসএএম/২৯ মার্চ ২০২০)


Comment As:

Comment (0)