ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা: দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মত সকল ট্রেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে “Prevailing Internet Based Trading: Problems and Prospects” শীর্ষক পাবলিক হেয়ারিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর পক্ষ থেকে এটি প্রথম পাবলিক হেয়ারিং।
বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে। সরকারের সেই সংস্কারগুলো নাগরিক যথাযথভাবে পাচ্ছেন কিনা, সেটা পেতে কোন দুর্ভোগ হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে জানতে এবং স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্য সব কাজের পাশাপাশি পাবলিক হেয়ারিংও একটি কাজ বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম।
সোমবার পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মত সকল ট্রেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে “Prevailing Internet Based Trading: Problems and Prospects” শীর্ষক গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিএসইসি’র কমিশনার মোঃ আব্দুল হালিম এসব কথা বলেন৷
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ডিএসই ট্রেনিং একাডেমী কর্তৃক এ শুনানীর আয়োজন করা হয়।
বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, বিএসইসি একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের মূলত কাজ হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং তার পাশাপাশি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করা। বিএসইসির বর্তমান কমিশন মনে করে, সরকারের যে নির্দেশনা রয়েছে সুশাসন নিশ্চিত তার প্রথম ক্ষেত্র হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জ ও তার ট্রেক হোল্ডারদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং শেয়ারবাজারের সহায়ক কাজ করাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। আজকে যারা এই পাবলিক হেয়ারিং এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন সেইসব ট্রেক হোল্ডারদের কাছ থেকেও বিএসইসির অনেক কিছু জানার রয়েছে। আজ যে বিষয় নিয়ে পাবলিক হেয়ারিং হচ্ছে (Internet Based Trading: Problems and Prospects) এর কারণ হচ্ছে আমরা যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি এবং আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছি তার আগে আমরা যে বর্তমান পর্যায়ে রয়েছি এটা যথাযথ আছে কিনা। বা এখানে যে সমস্যা ও সুবিধা রয়েছে সে বিষয়ে আপনাদের বলার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব এবং পরবর্তীতে এই সমস্যা সমাধান নিয়ে ও আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করব।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার বিকাশের ক্ষেত্রে ২০১৬ তারিখে সংযোজন হয় ডিএসই-মোবাইল অ্যাপ৷ এই অ্যাপ চালুর পর ক্রমবর্ধমান হারে মোবাইলে লেনদেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে৷ পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেএে সামনের দিনগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে মোবাইল অ্যাপ ও অন্যন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক ট্রেডিং-কে আরো গতিময় করতে বিএসইসি এবং ডিএসই কাজ করছে৷
রেজাউল করিম বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা ইনস্টিটিউশনাল পাবলিক হেয়ারিং শুরু করেছি। আপনারা জানেন পাবলিক হেয়ারিং হচ্ছে যারা যে কাজের সাথে জড়িত থাকে সে কাজ করতে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, কোন সেবা পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা, কোন কিছু জানার বিষয় আছে কিনা এবং তাদের কোনো পরামর্শ ও মতামত আছে কিনা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, আজকের পাবলিক হেয়ারিং এর বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে Internet Based Trading: Problems and Prospects,। ইন্টারনেট ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে এবং ব্রোকারেজের সাথে স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং কানেক্টেড হয়ে বিনিয়োগকারী যখন ট্রেড করতে পারবে, সরাসরি ক্রয় এবং বিক্রয় করতে পারবে সেটাই হবে Internet Based Trading। ২০১৬ সালে এ বিষয় চালু করে মোবাইলভিত্তিক অ্যাপ তৈরি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এই অ্যাপে ওয়ার্ক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে যেটা ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমের সাথে কানেক্টেড। লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রায় ৫০ হাজার বিনিয়োগকারী এই অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করেন যা প্রতিদিন লেনদেনের বাজার মূলধন এর ১০%।
তিনি আরো বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী নিজেই কেনাবেচা করতে পারে। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আমরা যে শারীরিক দূরত্বও মেনে চলছি তা এই অ্যাপে লেনদেনের মাধ্যমে সহজ হয়। অ্যাপ ব্যবহারের জন্য একটি আবেদন ফরম আছে, সেই আবেদন ফর্মটি পূরণ করে ব্রোকারেজ হাউসে জমা দিলেই সিস্টেম থেকে অটোমেটিক একটি আইডি এবং পাসওয়ার্ড বিনিয়োগকারীর মেইল আইডিতে চলে যাবে। এতে করে বিনিয়োগকারীর কোন তথ্য ব্রোকারেজ স্টক এক্সচেঞ্জ বা থার্ড পার্টি কেউ জানতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অন্য সব স্টক এক্সচেঞ্জের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ব্রোকারেজ হাউজ এর মাধ্যমে লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশ এবং ভারতে। উন্নত দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ গুলোতে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজেদের শেয়ার কেনাবেচা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেরা করেন।
Internet Based Tradingএর বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শেয়ারবাজারে যদি প্রাতিষ্ঠানিক ও সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই তাহলে আইটি প্ল্যাটফর্ম কে আরো আপডেট করতে হবে। এতে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পরে অংশগ্রহণকারীদের ইন্টারনেট ভিত্তিক ট্রেডিং- এর সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ রেজাউল করিম, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউল করিম৷ এসময় সারা দেশব্যাপি বিনিয়োগ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন৷
(এসআর/এসএএম/ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০)