ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মদিন পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা: বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ তিনি। ‘সুরসম্রাট’ তার উপাধি। তার নাম নিলেই হৃদয়ে সুরের ঢেউ খেলে যায়। তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। আজ তার ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা সংগীতের অনুরাগীরা আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে।
জন্মদিন উপলক্ষে তার জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুরে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ কলেজ ও সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদ আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে।
জানা গেছে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র জন্মদিন উপলক্ষে তার নিজ গ্রাম শিবপুর সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কলেজের উদ্যোগে কলেজ মিলনায়তনে ‘সুরসম্রাটের জীবন ও সাধনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভা শেষে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন চৌধুরী বিনিয়োগবার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পাশাপাশি সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভাসহ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র জীবনী নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করবেন।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে উপস্থিত থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি রানা শামীম রতন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম খান।
প্রসঙ্গত, ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, যা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। তিনি বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও পরিচিত ছিলেন। তার সন্তান ওস্তাদ আলী আকবর খান ও অন্নপূর্ণা দেবী নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
ওস্তাদ আলাউদ্দিনের বিখ্যাত শিষ্যরা হলেন পণ্ডিত রবি শঙ্কর, পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জি, বসন্ত রায়, পান্নালাল ঘোষসহ আরো অনেকে। আচার্য আলাউদ্দিন খাঁ নিজেও অনেক বিখ্যাত গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন।
সেতার, সানাই এবং রাগ সংগীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসেবে সারা বিশ্বে তিনি বিখ্যাত। মূলত সরোদই তার শাস্ত্রীয় সংগীতের বাহন। সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেটসহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্রে তার যোগ্যতা ছিল অপরিসীম।
আলাউদ্দিন খাঁ’র ডাকনাম ছিল আলম। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে সংগীতে তার হাতেখড়ি। সুরের সন্ধানে তিনি ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। অতঃপর কলকাতা গিয়ে তিনি প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তবে গোপাল কৃষ্ণ একটি শর্তারোপ করলেন আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণের সময়। কমপক্ষে ১২ বছর একনাগাড়ে সংগীত সাধনা করতে হবে সেখানে থেকে।
আলাউদ্দিন খাঁ রাজি হয়ে গেলেন আরোপিত শর্তে। কিন্তু সাত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন সংগীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ।
১৯৩৫ সালে বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের রানী কর্তৃক সুরসম্রাট খেতাবপ্রাপ্ত হন। ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মভূষণ ছাড়াও পদ্মবিভূষণ, বিশ্ব ভারতীয় দেশীকোত্তমসহ দিল্লি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।
(এসআর / ৮ অক্টোবর ২০২০)