যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশের ভিডিও স্টোরি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সৎকারের কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের গল্প নিয়ে তৈরি একটি সংবাদচিত্র (ভিডিওস্টোরি) যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিডিএনএ) দেয়া ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড আর মুরো অ্যাওয়ার্ডস-২০২১’ পেয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) সহযোগী অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বেনার নিউজ ভিডিও চিত্রটি প্রচার করায় ‘স্মল ডিজিটাল নিউজ অর্গানাইজেশন’ হিসেবে প্রতিযোগিতায় ‘এক্সিলেন্স ইন ভিডিও’ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার জিতেছে। আরটিডিএন এর ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) জয়ীদের তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। ভিডিও স্টোরিটি তৈরি করেছেন বেনার নিউজের প্রতিনিধি শরীফ খিয়াম। এটি প্রযোজনা করেছেন আসিফ এন্তাজরবি।
এ ব্যাপারে আরএফএ নিজেদের ওয়েবসাইটে জানায়, চলমান মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর একটি বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে ধারালো/তীক্ষ্ণ/ হুল-বেঁধানো সাংবাদিকতার জন্য বেনার নিউজে প্রকাশিত সংবাদটি পুরস্কার পেয়েছে।
আরএফএর সভাপতি বেফ্যাং বলেন, ‘সামান্য বা ন্যূনতম সেন্সর বিহীন স্থানীয় খবর না পাওয়া লাখ লাখ মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী তথ্য পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ আরএফএ অনুমোদিত বেনার নিউজ।’
‘এই পুরস্কার দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার একটি প্রমাণ, বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে তাদের জন্য, যারা একটি মারাত্মক মহামারির দুঃস্বপ্নসম দৃশ্যের মাঝেও লড়াই করছে,’ যোগ করেন তিনি।
বেনার নিউজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কেট বেডেল বলেন, ‘সংকটের মুহূর্তে সাধারণ মানুষের বীরত্বকে তুলে ধরে বেনার নিউজ বাংলা অসামান্য কাজ করেছে। মহামারির অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের সহানুভূতি ও সাহস এই প্রতিবেদনে গুরুত্ব পেয়েছে, যার পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের সাংবাদিকদের প্রাপ্য।’
গত বছরের জুনে বেনার নিউজের ইংরেজি সংস্করণে “বাংলাদেশি ভলান্টিয়ার্স বেরি ‘এবানডেন্ট’ কোভিড-১৯ ডেড” শিরোনামে এবং বাংলা সংস্করণে ‘করোনা ভাইরাস: মৃতের আত্মীয় স্বজন দূরে, শেষ যাত্রায় ভরসা স্বেচ্ছাসেবক’ শিরোনামে সংবাদ চিত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল। ‘করোনায় মৃত লাশ থেকে স্বজনরা দূরে, সৎকার করছেন স্বেচ্ছা সেবকরা’ শিরোনামে বাংলায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল তারা।
আরএফএ জানায়, দেশব্যাপী দুই মাসের লকডাউনের পর বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতি এবং মসজিদগুলো পুনরায় চালু করার কিছুদিন পরেই বেনার নিউজের ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছিল।
নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে, স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতদেহকে সম্মান জানাতে শত শত মৃতদেহ কবরস্থানে নিয়ে যান, কখনো কখনো শত শত মাইল ভ্রমণ করে পৈতৃক বাড়িতে লাশ পৌঁছিয়েছে।
বেনার নিউজ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইরত প্রথম সারির এমন মানুষের খুব কাছ থেকে কভারেজ দেয়ার জন্য স্কাইপ ইন্টারভিউ এবং অপেশাদার ফুটেজ ব্যবহার করেছিল। এটি তাদের নিজেদের গল্প বলার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে। চারপাশের মানুষের গোপনীয়তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের নিজস্ব ভিডিও সরবরাহের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আরএফএ আরো বলেছে, এভাবে কাজ করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বেনার নিউজের ওয়েবসাইট ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ওই সময় থেকে সরকার মহামারির মধ্যে তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করে দেয় বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
বেনার নিউজ দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার শ্রোতাদের নিরাপত্তা, রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি এবং মানবাধিকার সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ, তার প্রেক্ষিত এবং স্পষ্ট ব্যাখ্যাসহ সরবরাহ করে।
ওয়েব সাইটটিতে বাংলা, থাই, বাহাসা মালয়েশিয়া, বাহাসা ইন্দোনেশিয়া ও ইংরেজির ভাষার জন্য আলাদা হোমপেজ রয়েছে। আরএফএ জানায়, বেনার নিউজ বড় ঘটনা, সীমান্তের সমস্যা এবং সেন্সর বা উপেক্ষিত থাকা বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়।
এ বছর ম্যুরো অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ী অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর), এবিসি নিউজ এবং সিবিএস নিউজের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও জানিয়েছে আরএফএ।
যুদ্ধ সংবাদ দাতা হিসেবে সুনাম অর্জনকারী আমেরিকান সম্প্রচার সাংবাদিক অ্যাডওয়ার্ড আর মুরো সম্প্রচার সংবাদ পেশার যে মান তৈরি করেছিলেন, তার প্রতি সম্মান জানাতে মর্যাদাপূর্ণ এই অ্যাওয়ার্ডে সেসব স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদকে স্বীকৃতি দেয়, যা আরটিডিএনএ কোড অব এথিকসকে সমর্থন করে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করে এবং সম্প্রদায়ের সেবা হিসেবে সাংবাদিকতার গুরুত্ব ও প্রভাবের উদাহরণ তৈরি করে।
এর আগে নিউইয়র্ক উৎসব টিভি এবং চলচ্চিত্র পুরস্কার কর্তৃপক্ষ ৯ জুন তাদের ওয়েব সাইটে জানিয়েছিল, ২০২১ সালের পুরস্কারের জন্য ৪০ টির বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে লড়াই করে ‘নিউজ: রিপোর্ট/ফিচার’ বিভাগের ‘ফাইনালিস্ট’হয়েছে সংবাদটি। আগামী ১২ অক্টোবর ওই প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে।
(ডিএফই/১৮ আগস্ট, ২০২১)