ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে চার বছরের অডিট ও এজিএম করার অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি)কে বিগত চার হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নীরিক্ষা করার অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে বিএসইসির নিরীক্ষক প্যানেল থেকে অডিট ফার্মের এ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির মুলতবি থাকা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) নিয়মিত করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এরফলে কোম্পানিটিকে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের অডিট ও এজিএম করতে হবে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ অনুমোদন দেয়ার কথা জানানো হয়। বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। মূলত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে বিগত চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা এবং মুলতবি থাকা এজিএম নিয়মিতকরণের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের অডিটর নিয়োগ এবং এজিএম নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। এই বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে বিএসইসি’র নিরীক্ষকদের প্যানেল থেকে একটি অডিট ফার্মের দ্বারা ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত চারটি আর্থিক বছরের আর্থিক বিবরণীর অডিট সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর প্রয়োজনীয়তা মেনে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মুলতবি থাকা এজিএম নিয়মিত করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তাদের ইনভেস্টর প্রোটেকশন ফান্ড (বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা তহবিল) বা অন্য কোনো উৎস থেকে কোম্পানিটিকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন। ওই নির্দেশ পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই কোম্পানিটিকে ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়।
দীর্ঘ ৫ বছর ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এ লক্ষ্যে কোম্পানির পুরনো উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে নতুন আট জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং তহবিল তসরুপের কারণে প্রচুর দেনা ও লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে ইউনাইটেড এয়ার। এতে তহবিল সংকটে পড়েছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। এমনকি নতুন করে কোম্পানিটি চালু করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের খরচও বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড এয়ারের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মোট ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১ টাকা পাওনা মওকুফের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানির এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়ন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।
২০১০ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দেওয়া ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়। একইসঙ্গে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়ী বলে মনে কমিশন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তর করে বিএসইসি।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন- কাজী ওয়াহিদ উল আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন কাজী ওয়াহিদ উল আলম।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুঁজিবাজার থেকে ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে স্থানান্তর করা হবে। শিগগিরই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//