ইউনাইটেড এয়ারের সারচার্জসহ অন্যান্য পাওনা মওকুফ চেয়ে বিএসইসির চিঠি
শামীম আল মাসুদ: বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সারচার্জসহ অন্যান্য পাওনা মওকুফের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রস্তাবগুলো হলো- বেবিচকের সারচার্জসহ সমস্ত বকেয়া পাওনা সমূহ মওকুফ করা, মূল পাওনা পরিশোধ সাপেক্ষে বাকি টাকা মওকুফ করা এবং উড্ডয়ন আরম্ভ করার এক বছর পর থেকে কিস্তি পরিশোধ করার সময়সীমা শুরু করা।
আর কোম্পানিটির এমন প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। কোম্পানিটির এসব প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়াও কার্গো বিমানের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে বলে মনে করে বিএসইসি।
বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বকেয়া মোট পাওনা ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১ টাকা ৯৯ পয়সা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৩ টাকা ১৩ পয়সা। বাদবাকি টাকার মধ্যে রয়েছে ভ্যাট ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৫ টাকা, আয়কর ২ লাখ ১২ হাজার ২০ টাকা ৬৯ পয়সা এবং সারচার্জ (বাৎসরিক ৭২ শতাংশ হারে) ২৯২ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার ৩ টাকা ১৭ পয়সা।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠি উল্লেখ করা হয়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ এয়ারলাইন্স চালু করার জন্য উড়োজাহাজগুলো টেকনিক্যাল মূল্যায়ন করেছে এবং একটি ব্যবসায়িক প্ল্যান তৈরি করেছে। বিগত পাঁচ বছরের না করা আর্থিক অডিট করার কাজ চলছে। এমতাবস্থায় বিপুল সংখ্যক শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ও ব্যাংকের পাওনা বিবেচনায় কোম্পানিটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক প্রস্তাবিতগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন হতে বন্ধ থাকা এবং পরিত্যক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১ লাখ ৬০ হাজার প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত প্রায় ৭৯৩ কোটি টাকা সুরক্ষিত করার স্বার্থে এবং এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিএসইসি কর্তৃক ৮ জন অভিজ্ঞ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৪ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বেবিচকের সাথে আলোচনার জন্য ওই বছরের ১০ মার্চ পত্র প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৮ মে এয়ারলাইনটি পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে একখানা বাণিজ্যিক পরিকল্পনার প্রতিবেদন বেবিচক এ জমা প্রদান করা হয়। এ লক্ষে নতুন পর্ষদে সঙ্গে বেবিচকের ১১ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার ২ ও ৩ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বকেয়া পাওনা টাকার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির পর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) জন্য আবেদন করতে পারবে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। একইসঙ্গে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। এ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানিটির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়ী বলে মনে কমিশন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন- কাজী ওয়াহিদ উল আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন কাজী ওয়াহিদ উল আলম। আর এ ডুবন্ত ইউনাইটেড এয়ারকে সচল করার উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//