বগুড়ায় বিনিয়োগ শিক্ষা

বগুড়ায় বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্স সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ায় বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্স সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)। শনিবার (১৮ মার্চ) বগুড়ার নওদাপাড়ায় মম ইন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম- ২০২৩ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।

বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্সের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের ভালো ইকো সিস্টেম তৈরির জন্য যা দরকার তার প্রতিটি অঙ্গই বর্তমানে আমাদের আছে। ধীরে ধীরে সেটা আরো উন্নত পর্যায়ে যাচ্ছে। আমাদের দুইটি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে। তালিভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফার্মস রয়েছে। আমাদের ব্রোকার্স, মার্চেন্ট ব্যাংকস, অ্যাসেট ম্যানেজার, ক্রেডিট রেটিংস কোম্পানি, কাস্টডিয়ান, সিডিবিএল, সিসিবিএল, বিআইসিএম ও বিএএসএম রয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে জন্য আমরা নতুন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি। সেটা হলো ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএফএফ)। এটির মাধ্যমে আমরা অবন্টনকৃত লভ্যাংশ বা মুনাফা সংগ্রহ করে থাকি। পরবর্তীতে তা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলকরণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা আগামি দিনে আরো বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে বগুড়াবাসী যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভূমিকা রাখতে পারে এবং সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে সেজন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। দেশে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ও বিদেশিরা যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, চারদিকে এখন যুদ্ধ ও অস্থির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশে এমন ইকোনমিক টার্বুলেন্ট মোমেন্টেও পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টর আমরা ধরে রেখেছি। এটা ভালো অবস্থান এবং বড় ধরনের অর্জন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ তার টিমকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

তিনি বলেন, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অনেক জায়গাতে ধর্মঘট চলছে। জার্মানিতে ধর্মঘটের কারণে বিমানবন্দর বন্ধ হয়েছে। এরকম অস্থির অবস্থাতেও আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সামনের দিনে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ ও সঞ্চয় প্রয়োজন হবে এ দেশে। সম্মলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ দেশকে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। সব মিলিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। এই বাজারে যখন যা প্রয়োজন, আমরা রেগুলেটর হিসেবে সবকিছু করব। এখানে আমাদের কোনো প্রতিপক্ষ নেই। এখানে আমাদেরকে কেউ বাধা দিচ্ছে না। আমাদের যখন যেটা লাখছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুরু করে সবাই আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং এখন আমাদের সবাই মিলে পজিটিভ মাইন্ডে পার্টিসিপেশন দরকার। পার্টিসিপেশনের মাধ্যমে ট্রানজেকশন বাড়লে সেকেন্ডারি মার্কেট ভাইব্রেন্ট হবে।

তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মভাবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সেজন্যই ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেকের জন্য হয়ত ভালো হবে। অন্যান্য দেশের মার্কেটগুলোর যে অবস্থা, সে তুলনায় আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য প্রাথমিক কাজটি করছি। লাভ বা রিটার্ন পাওয়ার চেষ্টা সবারই থাকে। তবে, নিজেদের সুরক্ষা দেওয়াটা সবচেয়ে বড় কাজ।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট ও লংটার্ম ফাইন্যান্সের একমাত্র উৎস হচ্ছে পুঁজিবাজার। যেটা বছরের পর বছর ধরে হচ্ছে না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা লংটার্ম ফাইন্যান্সের প্রয়োজন হলে পুঁজিবাজারমুখী হবেন। গতকাল গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বারবার বলেছেন, লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট দায়িত্বগুলো বড় আকারে পুঁজিবাজারে স্থানান্তর করেন। তাই, আমাদের লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট, লংটার্ম ফাইন্যান্স, লংটার্ম লোন ও লংটার্ম রিটার্ন এসব কিছুর জন্য শুধুমাত্র পুঁজিবাজারমুখী হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলোদেশের সম্ভাবনা প্রচুর আছে। কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার সফর করেছি। সেখানে থাকা অবস্থায় এবং সেখান থেকে ফেরত আসার পর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীর সকল দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমরা বুঝতে পারছি যে, এখন সবকিছুই বাংলাদেশের দিকে ধাবমান। গত দুই বছর ধরে করোনার মধ্যেও দেশে ও বিদেশে এরকম বিনিয়োগ শিক্ষা, রোড শো ও ইনভেস্টর সামিট আয়োজন করেছি। তখন সবাই প্রশ্ন করত, রিটার্ন আসে না কেন? আমি বলেছিলাম, রিটার্ন আসতে দুই বা তিন বছর সময় লাগে। কিন্তু, দুই বছর পরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সবকিছুই এখন পজিটিভলি বাংলাদেশের দিকেই আসছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, কিছু দিন আগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সর বিষয়ে আপনারা শুনেছেন। যেটাকে বলা হয় চ্যাটজিপিটি। যেখান থেকে আমরা যেকোনো তথ্য জানতে চাইলে সে খুব সহজেই একটা উত্তর তৈরি করে দেয়। সামনের দিনগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে স্টেপ ফরওয়ার্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে। ট্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ কি সত্যি সত্যি অর্ধট্রিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন ডরারের ইকোনোমিতে রূপান্তরিত হতে পারবে? চ্যাটজিপিটি উত্তর দিয়েছে, বাংলাদেশে যদি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ যদি এভাবেই হয় এবং জিডিপি গ্রোথ রেট যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা যদি ঠিক থাকে, তাহলে ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনোমিতে রূপান্তরিত হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান মিলন উপস্থিত ছিলেন।

এই অধিবেশনে বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এছাড়া প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)