এনবিআর

রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে এআইয়ের সহায়তা নিতে চায় এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজস্ব আদায়, ফাঁকি প্রতিরোধ, রাজস্বসংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) টুলসের সহায়তা নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এনবিআরের কর্মপরিকল্পনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি বছর নেয়া পরিকল্পনাটি ঈদের আগে এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এনবিআরের দেয়া তথ্যমতে, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে চলমান অর্থনীতিতে অধিক গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে সব ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে স্বচ্ছতা আনা হবে। ভ্যাট থেকে রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সেজন্য উৎপাদন, বিতরণ ও পাইকারি বিক্রয় পর্যায়ে ই-ইনভয়েসিং সিস্টেম চালু করা হবে। সেখানেও এআই ও বিআইয়ের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। 

এ প্রসঙ্গে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনাটির খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত পরিকল্পনা এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তরে রয়েছে। চেয়ারম্যান অনুমোদন দিলে সেটি প্রকাশ করা হবে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে। উদ্যোগগুলোর কোনটি কত সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই বিষয়েও দিকনির্দেশনা থাকবে। যেকোনো দিন চেয়ারম্যান সেটির অনুমোদন দিতে পারেন।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ প্রণয়ন এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ নিশ্চিতকরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। 

এতে আরো বলা হয়, এ উদ্যোগের ফলে জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক হিসাব পাওয়া সম্ভব হবে। রাজস্ব আহরণের পরিসর সম্প্রসারণ হবে এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আসবে। একটি আধুনিক ও স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে। উদ্যোগটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশের স্তম্ভ হিসেবে স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। উদ্যোগটি এনবিআর ও তার আওতাধীন কর অঞ্চলগুলো বাস্তবায়ন করবে।

জানতে চাইলে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন কৌশল, নতুন গাইডলাইন রয়েছে। এছাড়া বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুলস নতুন। চূড়ান্ত পরিকল্পনায় হয়তো আরো চমক থাকবে।’

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তখনকার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ে এনবিআরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। 

তখন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, ওই চুক্তির ফলে সব শ্রেণীর নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ এবং পুরনো সংযোগ বহাল রাখার জন্য করদাতা শনাক্তকরণ সংখ্যার স্বচ্ছতা যাচাইয়ের পাশাপাশি করজাল সম্প্রসারণসহ কর নির্ধারণী প্রক্রিয়া সহজ হবে।

২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে করযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের সহযোগিতা চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে চিঠি দেয় এনবিআর। এনবিআর সংশ্লিষ্টদের ধারণা বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ যাচাই করতে পারলে অন্তত দুই কোটি করদাতা বেরিয়ে আসবে।

অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ডিজিটাল সার্ভের আওতায় আনতেও উদ্যোগ নেয় এনবিআর। এনবিআরের ধারণা, এ উদ্যোগ সফল হলে সেখান থেকে অন্তত ৫০ লাখ করদাতা করজালে অন্তর্ভুক্ত হবে।

এর আগে করের আওতা বৃদ্ধি ও আয়কর ফাঁকি বন্ধ করতে মোটরযান ও নৌযান, সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিগুলো দেয়া হয় বলে জানা গেছে। 

আয়কর রিটার্ন ও উৎসে কর কর্তন বেগবান করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এনবিআরের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে করের আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের জন্য নির্বাচন কমিশন, বিআরটিএ, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিডা, বেপজা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস সফটওয়্যারের সঙ্গে আলাদা চুক্তি সই করে এনবিআর। চুক্তির আওতায় বিআরটিএ থেকে গাড়ি মালিকদের এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্য যাচাই করে। 

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)