সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওযার চুক্তি করল বিডিবিএল
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ ব্যাংক সোনালীর সঙ্গে একীভূত হতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল অনুষ্ঠিত এক সভায় দুই ব্যাংকের মধ্যে এ চুক্তি হয়। অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, চুক্তি সইয়ের পর এখন ব্যাংক দুটির সম্পদ ও দায় নিরীক্ষা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে একীভূতকরণ চূড়ান্ত হবে। তখন বিডিবিএল বলে আর কোনো ব্যাংকের অস্তিত্ব থাকবে না।
দুই ব্যাংকের পর্ষদ একীভূতকরণের বিষয়ে চুক্তি করলেও বিডিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে গত মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তারা বিডিবিএলকে একীভূত না করতে সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন জানান।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে (বিএসআরএস) একীভূত করে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময় ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল শিল্পায়ন ও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণের জোগান নিশ্চিত করা। যদিও প্রতিষ্ঠার পরবর্তী পাঁচ বছর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অদক্ষতায় লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় বিডিবিএল। এরপর ব্যাংকটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিডিবিএলের পরিশোধিত মূলধন ৬০০ কোটি টাকা। গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের ৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকার আমানত জমা ছিল। একই সময়ে ব্যাংকটি ২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল। এর মধ্যে ৯৮২ কোটি টাকাই ছিল খেলাপির খাতায়। সে হিসাবে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের হার ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। গত বছর বিডিবিএল ১৩ কোটি টাকা নিট মুনাফায় ছিল।
বিডিবিএলের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর রাজউক এভিনিউ ও কারওয়ান বাজারে বিডিবিএলের দুটি বহুতল ভবন রয়েছে। ২৫ ও ২০ তলা এ দুটি ভবন থেকে আয়কৃত ভাড়া দিয়েই ব্যাংকটি পরিচালিত হয়। দুটি ভবনের বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালীর গত বছর শেষে মোট সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার আমানত জমা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে সোনালী ব্যাংক। এ ঋণের মধ্যে ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছিল খেলাপির খাতায়, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য বহুল সমালোচিত সোনালী ব্যাংক গত বছর ৩ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে। একই বছরে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৭৪৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। এ ব্যাংকের সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা। সে তুলনায় বিডিবিএল খুবই ছোট ব্যাংক। ব্যাংকটি অধিগ্রহণের কোনো প্রভাব সোনালীর ওপর পড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের প্রায় আট হাজার কর্মী আছেন। আমাদের আরো লোকবল দরকার। বিডিবিএলের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শঙ্কিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
দেশের ব্যাংক খাতে গত ছয় মাস ধরে মার্জার-অ্যাকুইজিশন নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা জানায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত মার্চে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করে পদ্মা ব্যাংক। এরপর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক এবং ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হওয়ার আলোচনা ওঠে। তবে এরই মধ্যে বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে, তারা সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না। আর ন্যাশনাল ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হবে না।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//