২০২৪-২৫ বাজেটে প্রত্যক্ষ কর বাড়ছে
ডেস্ক রিপোর্ট: আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ছে। আগামী বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর সিংহভাগ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করার লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হতে পারে দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। এজন্য পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ করের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এনবিআর। আগামী বাজেট প্রত্যক্ষ কর, অর্থাৎ আয়কর খাতে ২০ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর হিসেবে পরিচিত মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, কৃচ্ছতার প্রভাব, ডলারের উচ্চমূল্য ছাড়াও আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরের ৯ মাসে যত টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা ছিল, আদায় হয়েছে তার ৯২ শতাংশের কিছু বেশি। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রা থেকে আদায় ৮ শতাংশের মতো কম হয়েছে। অবশ্য শেষ তিন মাসে আদায় কিছুটা বাড়ে প্রতিবছরই। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ নয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় বাড়ে। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরের ১৭ শতাংশ বাড়তে যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা, যা খুব বেশি নয়। তবে এবার প্রত্যক্ষ করের দিকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে সব মিলিয়ে ইনকাম ট্যাক্স আয়কর আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, উভয় খাতে সমান অর্থ আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। তবে এই লক্ষ্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় আয়কর খাতে ২০ শতাংশ এবং ভ্যাট বাবদ আয় ১৭ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হবে। এর মধ্যে ১০ লাখ বা এর বেশি মূসক (ভ্যাট) পরিশোধের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট বা এ-চালান বাধ্যতামূলক করা হবে। বর্তমান ই-পেমেন্ট বা এ-চালান শুধু ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি ভ্যাট পরিশোধে ব্যবহারের বিধান আছে। সেটি কমিয়ে আনলে এই খাত থেকে অনিময় দূর হবে এবং রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করছে এনিবআর। এছাড়া ইলেকট্রনিকস ট্যাক্স ডিটেকশন সোর্স (ইটিডিএস) অনলাইন প্ল্যাটফরম চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবার মান উন্নয়ন ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর আইন, ২০২৩ প্রয়োগ করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে অনেক আয়করদাতা আছেন, কিন্তু তারা কর দিচ্ছেন না। তাদের করজালের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইডিএফ মেশিন স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। খুব শিগগিরই বহু প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা হবে। এছাড়া নতুন করদাতাদের করজালে আনতে বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়তে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে এবারের বাজেটে আয়কর খাতে কর অবকাশ সুবিধা কাটছাঁট করা হতে পারে। বিত্তবানদের কাছ থেকে আয়কর আদায় বাড়াতে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। করজাল বাড়াতে নতুন কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম জোরদারের পরিকল্পনা থাকবে। শুল্ক খাতে আগামী বাজেটে নতুন শুল্ক আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকবে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের বেশির ভাগই নীতি সংস্কার সংক্রান্ত। সেই প্রতিফলন থাকবে আগামী বাজেট প্রস্তাবে। এজন্য কর অব্যাহতির পরিমাণ কমিয়ে আনা, বকেয়া শুল্ক আদায় কার্যক্রম জোরদার, আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া অটোমেশন এবং কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কার্যকর রূপরেখা থাকবে বলে জানা গেছে।
বিগত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর আদায় করেছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এই বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ২২.১৪ শতাংশ। পরের অর্থবছরে এনবিআরের আহরণ বেড়ে হয় ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। তবে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে হয় ১১ শতাংশ। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। প্রবৃদ্ধি আরো কমে হয় ৯.৮৯ শতাংশ।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//