Ashulia Dhaka Expressway commission

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ‘কমিশন দ্বন্দ্বে’ জটিলতা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে কমিশন নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানরা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কাজের ধীরগতিরও সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি কর্পোরেশন (সিএমসি) ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এপিক সলিউশনের এই দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এদের দ্বন্দ্বের মূল কারণ ৬ শতাংশ কমিশন। 

প্রকল্প কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃতীয় পক্ষকে কমিশন দেওয়ার ফলে একদিকে প্রকল্পের খরচ বেশি হচ্ছে। এছাড়া এ বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে প্রকল্পে ধীর গতিও তৈরি হতে পারে। এতে বাংলাদেশেরই ক্ষতি।  

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সিএমসি ও এপিক সলিউশনের সঙ্গে ২০১৫ সালে একটি চুক্তিস্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সিএমসিকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করবে এপিক সলিউশন। বিনিময়ে তাদের ৬ শতাংশ কমিশন দিবে সিএমসি। তবে চুক্তির ২ বছর মেয়াদের মধ্যে কাজ পায়নি সিএমসি। এর মধ্যে নবায়ন করাও হয়নি চুক্তি। পরবর্তীতে প্রকল্পের কাজ পেলেও এপিক সলিউশনকে কমিশন দিতে অস্বীকৃতি জানায় সিএমসি। 

এদিকে প্রতিষ্ঠান দুটির দ্বন্দ্ব এখন গড়িয়েছে দেশের আদালতে। তবে প্রতিষ্ঠান দু’টির করা ঐ চুক্তি অনুযায়ী তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ হলে সেটি চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য শালিশ কমিশন নিষ্পত্তি করার কথা।

এপিক সলিউশনের স্বত্বাধিকারী শাহেদ রহমান বশির ২০২৩ সালে একটি রিট করেন। পরে হাইকোর্ট সিএমসি’র বিল থেকে ৬ শতাংশ কমিশন রিজার্ভ রাখতে সেতু বিভাগের সচিব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবদের নির্দেশ দেন। এরপর সিএমসি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। 

পরে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হলে, এ বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বে একটি ভিন্ন হাইকোর্ট বেঞ্চকে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টে বিষয়টি নিষ্পতি হওয়া না পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা জারি থাকবে। 

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এপিক সলিউশনের ৬ শতাংশ টাকা রিজার্ভ রাখার জন্য আদালত শুরুতে রায় দেন। পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে স্থিতাবস্থা জারি করে দুই মাসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে আপিল বিভাগ থেকে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা চাই দ্রুত সমাধান হোক। আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হবে আমাদের সেই রায় মানতে হবে। 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, জি টু জি প্রকল্পে কমিশন বা তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাবের নজির এর আগে আমি দেখিনি। কারণ যে দেশের সঙ্গে চুক্তি হয় সেই দেশের সরকারই ঠিকাদার, পরামর্শক নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে তৃতীয়পক্ষের আবির্ভাব অস্বাভাবিক। 

তিনি আরো বলেন, ৬ শতাংশ কমিশন প্রকল্পের বড় একটা অংশ। তার মানে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কাউকে ৬ শতাংশ কমিশন দেয়ার ফলে প্রকল্পে বিনিয়োগ ভারী হচ্ছে। এতে আমাদের প্রকল্প আমরা যে টাকায় বাস্তবায়ন করতে পারতাম, এর চেয়েও কিছুটা বেশিতে করা লাগছে।

প্রসঙ্গত, হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) হতে শুরু হয়ে আব্দুল্লাহপুর, ধউর, আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়েটি ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর প্রকল্প ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। ২ শতাংশ হার সুদে প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে চীন (এক্সিম ব্যাংক)। যা ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বাকি ১৫ শতাংশ খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে হয়েছে ২৬ শতাংশ। আর পিয়ার হেড দৃশ্যমান হয়েছে ২১ কিলোমিটার পর্যন্ত।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)