আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার ছাড়ের অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় অনুমোদন করেছে সংস্থাটির পর্ষদ। গতকাল আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় রিভিউ মিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে এ অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় এ দফায় ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওয়া যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফের পর্ষদ সভায় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই অর্থ ছাড় করা হবে বলে আশা করছি।’
ঋণ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রগতি পর্যালোচনায় ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত আইএমএফের রিভিউ মিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এতে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। রিভিউ মিশন শেষে আইএমএফের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতিতে তখন জানানো হয়েছিল, ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় রিভিউ সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগুলোর বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারা ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মতৈক্যে পৌঁছেছে। রিভিউটি বর্তমানে আইএমএফের পর্ষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্ষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তির ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) বা ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার পাবে। এর মধ্যে ইসিএফ-ইইএফের আওতায় ৭০ কোটি ৪৭ লাখ এসডিআর বা ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং আরএসএফের আওতায় ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার এসডিআর বা ২২ কোটি ডলার দেয়া হবে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ যেসব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সেটি কঠিন বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে পথ চলতে সাহায্য করবে বলে রিভিউ মিশন শেষে সংস্থাটির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি বহিঃস্থ ও মূল্যস্ফীতির চাপ আরো তীব্র হয়ে ওঠে তাহলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী সময়ে আরো কঠোর নীতি গ্রহণের জন্য তৈরি থাকতে হবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
মিশন চলাকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার কারণ জানতে চেয়েছেন। তাছাড়া প্রত্যাশিত পরিমাণে রাজস্ব আদায় না হওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের করছাড় সুবিধায় কাঁটছাট করা, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিশন কর্মকর্তারা। কর্মসূচির আওতায় অধিকাংশ শর্ত পূরণ হওয়ার কারণে আইএমএফের কর্মকর্তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূচকের লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ অনুরোধ মিশনটির কর্মকর্তারা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//