চীনে ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো
ডেস্ক রিপোর্ট: চীনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে আগ্রহ হারাচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো। দেশটিতে সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে অনিশ্চয়তা, গুপ্তচরবিরোধী আইনের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণে সতর্ক হচ্ছে তারা। খবর নিক্কেই এশিয়া।
টোকিওভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান তেইককু ডাটাব্যাংকের তথ্যমতে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে মোট ১৩ হাজার ৩৪টি জাপানি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১২ সালে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। এর দুবছর পর তা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যায়। ২০২২ সালে চীনে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৩২৮টি বাড়ে। এর পরের তিনটি জরিপে তা রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে।
তেইককু ডাটাব্যাংকের গবেষক ডাইসুকে ইইজিমা বলেন, ‘ব্যবসায়িক সাফল্য থাকা সত্ত্বেও জাপানি কোম্পানিগুলো চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ হারাচ্ছে। সম্ভবত পরিসংখ্যানে যে পরিমাণ আসছে, তার চেয়ে বেশি হারে আগ্রহ হারাচ্ছে কোম্পানিগুলো।’
ডাইসুকে ইইজিমা বলেন, ‘সাশ্রয়ী শ্রমমূল্যের কারণে জাপানি কোম্পানিগুলো চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিল। কিন্তু গত দশকে শ্রমমূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথের কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশও ঝুঁকিতে আছে। তাই এ মুহূর্তে কোম্পানিগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলের কেন্দ্রে চীনকে রাখতে চায় না, বরং চীনে সহযোগী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী তারা।
তেইককু ডাটাব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চীনে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির মধ্যে ৩৯ শতাংশ শিল্পোৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে গাড়ি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
জরিপের ফলাফল বলছে, চীনকে ক্রমাগত ‘অনিশ্চিত’ হিসেবে বিবেচনা করছে জাপানি কোম্পানিগুলো। ২০২৩ সালে গুপ্তচরবিরোধী আইনের আওতায় জাপানি কোম্পানি অ্যাস্টেলাস ফার্মার এক কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক বিদেশী কোম্পানি দেশটির আইনি অস্পষ্টতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে।
লিজিমা বলেন, ‘জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে জরিপে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। স্থানীয় সরকারের কঠোর নীতিমালার কারণে চীনের বাইরের কোম্পানিগুলো তাদের কার্যালয় বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে।’
২০২৩ সালে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ৫০০টির বেশি জাপানি কোম্পানির ওপর জরিপ চালায়। এতে কোম্পানিগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘কোন দেশগুলো আগামী তিন বছরে ব্যবসার জন্য সম্ভাবনাময়’। ওই জরিপে চীন তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ এবং একটি আকর্ষণীয় বাজার। দেশটির জাপানি খাবারের প্রতি আগ্রহ রেস্তোরাঁর মালিকদের উৎসাহিত করছে। টোকিওভিত্তিক রেস্তোরাঁ টরিডল হোল্ডিংস এ গ্রীষ্মে সাংহাইয়ে তার প্রথম চীন শাখা খুলছে। বৃদ্ধাশ্রম খাতও একটি সম্ভাবনাময় খাত। কেননা চীনের জনসংখ্যা বাড়ছে। নার্সিং কেয়ারের সরঞ্জাম ভাড়া ও বিপণনকারী জাপানি কোম্পানি যমশিতা মার্চে সাংহাইয়ে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। যমশিতার চীন শাখার প্রধান আরাটা নাগাই বলেন, ‘এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং ঝুঁকিমুক্ত নয়। কিন্তু আমরা দেশের ২০ কোটি বয়স্ক জনগণের মধ্যে সুযোগ দেখতে পাচ্ছি, যা সম্পূর্ণ জাপানি জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।’
এসব কারণে জাপানি ব্যবসায়ীদের একটি বড় সংখ্যায় চীন ছাড়বে না বলে মত গবেষক ইইজিমার। তিনি বলেন, ‘জাপানি কোম্পানিগুলো দেশ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে সত্য। কিন্তু তাদের উপস্থিতি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাবে এমন সম্ভাবনা কম।’
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//