চীনের পরিবর্তে বিকল্প বিনিয়োগ বাড়ছে জাপান-ভারতে
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রাইভেট ইকুইটি, রিয়েল এস্টেট ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মতো বিকল্প বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ক্রমে জৌলুশ হারাচ্ছে চীন। এশিয়ার বৃহত্তম এ অর্থনীতির বিকল্প খুঁজছেন লগ্নিকারকরা। সেদিক থেকে প্রাধান্য পাচ্ছে জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। লন্ডনভিত্তিক বিকল্প বিনিয়োগবিষয়ক গবেষণা সংস্থা প্রেকিনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (এআইএফ) বা বিকল্প বিনিয়োগ অতিপ্রচলিত স্টক, বন্ড ও নগদ বিনিয়োগ থেকে আলাদা। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে হেজ তহবিল, রিয়েল এস্টেট, বিভিন্ন ধরনের পণ্য, মূল্যবান ধাতব কয়েন, প্রাইভেট ইকুইটি, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নন-ফাঞ্জিবল টোকেন, শিল্পকলা প্রভৃতি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাইভেট ইকুইটি বিভাগে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সংগৃহীত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। এর মধ্যে জাপানে বিনিয়োগ হচ্ছে ৫০০ কোটি ডলার। এছাড়া অঞ্চলজুড়ে বৈচিত্র্যময় খাতে বিনিয়োগের জন্য ৬৯০ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অবকাঠামোগত বিনিয়োগের জন্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে চীন ছাড়া বেশ কিছু দেশ এগিয়ে আছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। সাম্প্রতিক বছরে বিনিয়োগকারীরা ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্লান্ট, ফাইভজি কানেক্টিভিটি ও ডাটা সেন্টার স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অবশ্য বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনের বাইরে গন্তব্যগুলো পরিপূরক হয়ে উঠতে পারেনি। জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বিকল্প বিনিয়োগে শ্লথগতি দেখা গেছে। কারণ হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক মন্থরতার প্রভাব, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং উচ্চ সুদহারসহ কঠোর ঋণ শর্তের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া দেশটির ভোক্তা চাহিদার পতন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে বিকল্প বিনিয়োগের জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তহবিল সংগ্রহ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আসে ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে। ওই সময় ৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে প্রেকিনের এশিয়া-প্যাসিফিক ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান অ্যাঞ্জেলা লাই বলেন, ‘প্রাইভেট ইকুইটি বিভাগে ২০২১ সালের তুলনায় লেনদেনের গতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
স্টকের মতো পাবলিকলি ট্রেড করা সম্পদের তুলনায় বিকল্প বিনিয়োগ কম সহজে কেনা বা বিক্রি হয়। অবশ্য এ ধরনের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অংশগ্রহণকারীরা উচ্চ রিটার্নের কারণে আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন।
আজকাল জাপানের বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে এ জাতীয় বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত করছেন। উদাহরণস্বরূপ জাপানের সরকারি পেনশন বিনিয়োগ তহবিল বিকল্প বিনিয়োগের জন্য তাদের পোর্টফোলিওর ৫ শতাংশ আলাদা করে রেখেছে। যদিও বর্তমানে মোট সম্পদের ১ দশমিক ৫ শতাংশ এতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
প্রেকিনের অ্যাঞ্জেলা লাই বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে যারা তহবিল পরিচালনা করছেন তাদের অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় বিনিয়োগ করা যায় সে বিষয়ে সতর্কতার কারণে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন তারা। বাছাইয়ের জন্য বেশি সময় নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা এবং আগের চেয়ে বেশি দাম ও সুযোগ খুঁজছেন।’
২০২১ সালের আগে বিনিয়োগকারীরা খুব আগ্রহের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি এগিয়ে নিতেন। কিন্তু বর্তমানে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করছেন। আগামী বছরের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার হতে পারে উল্লেখ করলেও অ্যাঞ্জেলা লাই জানান, খাতজুড়ে থাকা সতর্কতার কারণে এ পুনরুদ্ধার গতি মন্থর হবে।
এ মন্থরগতির পেছনে রয়েছে ২০২১ সালের আগের তুলনায় চীনের অর্থনীতিতে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির অনুপস্থিতি। দেশটির ব্যবসায়িক পরিবেশের প্রতি তিক্ত মনোভাব বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে।
অ্যাঞ্জেলা লাইয়ের মতে, চীনের ধীর অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে বিকল্প বিনিয়োগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও রিয়েল এস্টেটে। এসব খাতে এখন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। জাপানের বাইরে এখন রিয়েল এস্টেটকে ধরা হচ্ছে বিকল্প বিনিয়োগের জন্য দুর্বল এলাকা।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে চীনের বাইরে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ পরিবেশ ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। এসব গন্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। তবে চীনের শ্লথ অর্থনীতির জন্য বিনিয়োগে যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার হতে সময় লাগবে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//