ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার
ডেস্ক রিপোর্ট: বড় ধরনের অস্থিরতার পর আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার। এ প্রবণতার ওপর প্রভাব ফেলেছে প্রকাশ হতে যাওয়া মার্কিন মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদন। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটিতে ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান রয়েছে সুদহার। এ প্রতিবেদন থেকে সুদহারের সম্ভাব্য কাটছাঁট বিষয়ে চূড়ান্ত ধারণা পাওয়া যাবে। তাই বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের নজর এখন সেদিকে। খবর: দ্য ন্যাশনাল।
এশিয়ার পুঁজিবাজার গত সপ্তাহ থেকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। চলতি সপ্তাহেও তা অব্যাহত রয়েছে। মরগ্যান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষণ করে। সংস্থাটি জানায়, সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকালে এমএসসিআই সূচক দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে হংকংয়ের সূচক বাড়লেও চীনের অধিকাংশ সূচক অপরিবর্তিত। ভারতের প্রধান শেয়ার সূচকও দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার কমানোর অপেক্ষায় আছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সেপ্টেম্বরে বৈঠকে বসবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। সম্প্রতি ফেড চেয়ারম্যান জেরোমে পাওয়েল ধারণা দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর এক দফা সুদহার কমতে পারে। বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে এর হার হবে দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে সেপ্টেম্বরের বৈঠককে সামনে রেখে আজ দেশটিতে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এটিও ফেডের সিদ্ধান্ত ও পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে।
ইউএইর আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমিরেটস এনবিডির বাজার অর্থনীতি বিভাগের প্রধান এডওয়ার্ড বেল বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জুলাইয়ের মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের দিকে নজর রাখবেন। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সভায় ফেড কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, সেদিকেও নজর থাকবে।’
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপের পুঁজিবাজারগুলো কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। এর আগে জুলাইকেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান খাতের হতাশাজনক প্রতিবেদন প্রকাশের পর মন্দার আশঙ্কায় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোয় ২০০৮ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ দরপতন ঘটে। জাপানের পুঁজিবাজার সূচকও ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যায়, যা ১৯৮৭ সালের ‘ব্লাক মানডে’র পর সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি৫০০, ডাউ ও ন্যাসডাক প্রভৃতি পুঁজিবাজার ৫ আগস্ট শুরু হওয়া সপ্তাহে দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরপতনের মুখে পড়ে। এতে বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতাও তুঙ্গে ওঠে। ওয়াল স্ট্রিটের এ-সংক্রান্ত সিবিওই ভোলাটালিটি ইনডেক্স ২০২০ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর সময়ে এ সূচক সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল।
এডওয়ার্ড বেল বলেন, ‘বাজারে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অস্থিরতা ছিল। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আজ প্রকাশ হতে যাওয়া সিপিআই জুনের তুলনায় জুলাইয়ে দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি হেডলাইন (সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য অন্তর্ভুক্ত) এবং কোর (খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের মূল্য ব্যতীত অন্য পণ্য অন্তর্ভুক্ত) উভয় সিপিআইয়ের জন্য প্রযোজ্য। তবে সিপিআই বাড়লেও তা সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে ফেডকে সরাতে পারবে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমকে ফেডের গভর্নর মিশেল বোম্যান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ঝুঁকি আছে।’ এর অর্থ সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমাতে ফেড প্রস্তুত নাও থাকতে পারে।
এডওয়ার্ড বেল বলেন, ‘এখন আগের মাসের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাজারসংশ্লিষ্টরা ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমানোর প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যদি দশমিক ২ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে প্রত্যাশিত হারে সুদহার না-ও কমানো হতে পারে।’
এদিকে আবুধাবি ও দুবাইয়ের শেয়ারবাজার সোমবার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটের ডিএফএম সাধারণ সূচক লেনদেনের শুরুতে দশমিক ১ শতাংশ বাড়ে।
অন্যদিকে আবুধাবি সিকিউরিটিজ মার্কেটের প্রধান সূচক বাড়ে দশমিক ২ শতাংশ।
একই সময়ে লন্ডনের এফটিএসই ১০০-এ স্টক ফিউচার ৪ শতাংশ বেশি দামে লেনদেনে হয়েছে। এছাড়া প্যারিসের সিএসি-৪০-এ শেয়ারের সূচক দশমিক ৩৫ শতাংশ ও জার্মানির ডিএএক্সে শেয়ার সূচক দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের ফিউচারও দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর ফিউচার যথাক্রমে দশমিক ৫ ও দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//