BRAC University Financial and Economic Reforms Meeting

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ‘ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ সংলাপ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ‘ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর, ২০২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী সংলাপে বিভিন্ন সেক্টরের নীতি নির্ধারক, ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালস, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে একটি টেকসই, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কার্যকর কৌশল প্রস্তাব করেন।

দিনব্যাপী এই সংলাপ আয়োজনে একটি প্লেনারি সেশন, চারটি প্যানেল আলোচনা এবং প্রায় ১৫টি পোস্টার প্রেজেন্টেশনে দেশের আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ও জরুরি সংস্কারের বিষয়গুলো উঠে আসে। সংলাপ অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল-ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, আর্থিক অপরাধ ও কমপ্লায়েন্স এবং ইকোনমিক পলিসি ও আর্থিক ব্যবস্থা।

সংলাপ অনষ্ঠানের ব্যাংকিং এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর বর্তমান প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা এবং উন্নতির সুযোগগুলো চিহ্নিত করা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। সেই সাথে আলোচকরা পুঁজিবাজারের দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজে বের করার বিষয়টিও আলোচনা করেছেন। তারা আর্থিক অপরাধ ও নিয়ন্ত্রণসহ অর্থপাচার প্রতিরোধ, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন প্রতিরোধ এবং মূলধন পাচার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার উপায় বের করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিমালা এবং কর সংস্কার নিয়ে নীতিমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করা হয়।

এই সংলাপ অনুষ্ঠানে ‘অ্যাকশেনেবল ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসিস ফর অ্যান ইনক্লুসিভ, ইকুইটেবল অ্যান্ড প্রোসপেরাস বাংলাদেশ’ শীর্ষক উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে প্রধান বক্তা এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হোসেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

প্লেনারি সেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর মুজিবুল হক। একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রফেসর মুজিবুল হক জানান, একটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।  তিনি বলেন, আর্থিক খাতে বিশাল ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

তিনি আরো বলেন, আর্থিক খাতকে ফলপ্রসুভাবে সংস্কার করতে হলে পদ্ধতিগতভাবে এগুতে হবে যাতে দেশের প্রান্তিক মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা সংস্কারের ক্ষেত্রে একটা পদচিহৃ রেখে যেতে চায় যাতে পরবর্তী সরকার এবং নীতি নির্ধারকের সেই পথটাকে অনুসরণ করতে পারে। তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জুলাই আন্দোলনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই সাহসিকতাই এই আন্দোলন সফল করেছে এবং একটি অদম্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তিনি তার বক্তব্যে ক্ষমতাসীনদের সততার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘মিথ্যা পরিসংখ্যান প্রকৃত উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন যে, ‘অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে সংস্কার সফল হবে না যা মানুষের জন্য হবে অত্যন্ত কষ্টের।’

তিনি তার বক্তব্যে ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, স্যার ফজলের কর্মময় জীবন আমার এবং আমাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ তার বক্তব্যে পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতাকে একটা বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন। তিনি ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির গুরুত্বের ওপর জোর দেন যা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন করতে সহায়তা করবে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হোসেন সেলিম বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোরভাবে নীতি প্রয়োগ করতে হবে। সেটা না হলে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।”

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, এই সময়ের বাংলাদেশ আমাদের সবার জন্য একটি বিশেষ উপহার এবং এর টেকসইতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আর্থিক সংস্কারকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেন, যার প্রতি এখন বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই উদ্যোগ একটি প্রমাণ যে একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অর্থপূর্ণ সংস্কার চেষ্টায় নেতৃত্ব দেবে।

সংলাপ অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনাগুলোতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, লংকাবাংলা ফিন্যান্সের এমডি হুমাইরা আজম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রাইহান এবং ইউএসএআইডি’র ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড গভর্নেন্স ডিরেক্টর মিখাইল ট্রুব্লাডসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

দিনব্যাপী এই সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে নতুন নতুন সমাধান প্রস্তাব করেন। সংলাপের প্রস্তাবনাগুলো একটি স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সংলাপ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রস্তাবনাগুলো ইভেন্টের প্রকাশনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা তাদের মতামত সবার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)