Basundhara Shah Alam Gong Asset Seized

বসুন্ধরার শাহ আলমদের সম্পদ জব্দের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠি বসুন্ধরার কর্ণধার শাহ আলম ওরফে আহমদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ কোর্ট সম্প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শাহ আলমের ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আদালতে এ আবেদন জানিয়েছে দুদক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

যাদের সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ওরফে আহমদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শাহ আলমের ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর ও তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, আরেক ছেলে সাদাত সোবহান ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান এবং আরও দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানভীর ও সাফওয়ান সোবহান।

আদালত শাহ আলমের পরিবারের আটজনের সম্পদ জব্দের আদেশের অনুলিপি সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে পাঠাতে বলেছেন। পাশাপাশি একই অনুলিপি দিতে বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ)। এছাড়াও দেশের মানুষের কাছে তাদের অর্থ পাচারের মত কুকীর্তি তুলে ধরতে সংবাদপত্রে প্রকাশ করার তাগিদ দেন।

এর আগে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে একই আদালত গত ২১ অক্টোবর আলোচিত ব্যক্তিদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

তারও আগে গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আলোচিত ব্যক্তিদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন।

বসুন্ধরার শাহ আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই টাকায় তারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক কোম্পানি। এছাড়াও তারা নিজ নামে এবং বিদেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর নামে বিভিন্ন দেশে সম্পদ কিনেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ট কিছু ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল অসংখ্য বাড়ি কেনার সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় বসুন্ধরার শাহ আলম এবং তার ছেলেদের নামও আছে।

এদিকে দুদক বিভিন্ন দেশের ১৯টি কোম্পানিতে শাহ আলম ও তার ছেলেদের বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে। আর এই বিনিয়োগের অর্থ সংস্থান করা হয়েছে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে।

বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠিগুলোর একটি। ভূমি দস্যুতার মাধ্যমে এই গ্রুপের উত্থান। সাধারণ মানুষের জমি ও সরকারের খাস জমি দখল করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা নামের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন এক সময়ের ফুটপাতের ব্যবসায়ী শাহ আলম, যিনি পরে নিজের নামকরণ করেছেন আহমদ আকবর সোবহান।

গ্রুপটির বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা ছাড়াও নানা ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, বিপুল টাকার বিনিময়ে ওই সরকারের লোকদের ম্যানেজ করে গ্রুপটি নানা অন্যায্য সুবিধা বাগিয়ে নেয়। তবে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গ্রুপটির অপকর্মের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়। সরকার পতনের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মত বিনিময় সভায় বসুন্ধরার কর্ণধার শাহ আলম ঘোষণা দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার সঙ্গে আছেন তিনি।

বসুন্ধরার চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার সন্তানরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বিনিয়োগকারী কোটায় নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর এই সুবাদেই দেশটিতে একাধিক কোম্পানি নিবন্ধন করে সেসব কোম্পানির নামে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অসংখ্য বাড়ি কিনেছেন তারা।

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর বসুন্ধরার অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিআইডি বসুন্ধরার অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বসুন্ধরার দুর্নীতির তদন্ত করছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর আদালত বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ এই পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অন্যদিকে ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)