আরাকান আর্মি

রাখাইনে বিদেশী বিনিয়োগ ব্যবসা ও প্রকল্প সুরক্ষার ঘোষণা আরাকান আর্মির

ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারের রাখাইনে বিদেশী বিনিয়োগ, ব্যবসা ও প্রকল্পের সুরক্ষা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরাকান আর্মি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়,

বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আরাকানের জনবিপ্লবী সরকার (আরাকান পিপলস রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্ট বা এপিআরজি) এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়তা করবে এমন সব ধরনের বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় ও স্বীকৃতি দেয়। এসব বিনিয়োগ কার্যক্রম, প্রকল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার বিশেষ যত্নবান হবে। বিদেশী বিনিয়োগ ও প্রকল্পগুলোর অব্যাহত কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করা হবে। একই সঙ্গে পরস্পরের জন্য লাভজনকভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতেও চাই আমরা।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সফল সমরাভিযান প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির রাখাইনের সিত্তে ও চিন রাজ্যের পালেতওয়া পূর্ণরূপে দখল করে নেয়ার ঘটনায় ভারতে উদ্বেগ তৈরি করে।

পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যমতে, ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট (পুবে চলো) নীতিমালায় পালেতওয়া ও সিত্তের অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এ দুই শহরকে কেন্দ্র করেই ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে উচ্চাভিলাষী কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট। আরাকান আর্মির উত্থান প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল ভারতকে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরাকান আর্মি বিদেশী প্রকল্পের সুরক্ষা দেয়ার ঘোষণা দিলেও ভারতের পক্ষে উদ্বিগ্ন হওয়ার এখনো যথেষ্ট কারণ রয়ে গেছে। সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে ভারতের বৈরী প্রতিবেশী চীনের সুসম্পর্ক শুরু থেকেই নয়াদিল্লির জন্য বড় উদ্বেগের কারণ ছিল।

আরাকান আর্মির বিবৃতিতেও চীনের সঙ্গে গোষ্ঠীটির সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের সক্রিয় নেতৃত্বে ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ, আরাকান আর্মির রাজনৈতিক সংগঠন) কোকাং ও তা’আং গোষ্ঠীর সঙ্গে একযোগে চীন ও মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তে স্থিতিশীলতা রক্ষা, সহিংসতা নির্মূল ও অনলাইন জুয়া দমনসহ (কিয়ার ফায়ান্ট) বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা আরো জোরালো করেছে। হাইগেং চুক্তি বাস্তবায়নে সংগঠনটি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।

প্রসঙ্গত, হাইগেং চুক্তি হলো চীনের মধ্যস্থতায় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স (আরাকান আর্মিসহ তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মিত্রবাহিনী) এবং নেপিদোর সামরিক জান্তার মধ্যে চীন-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চুক্তি।

আরাকান আর্মির দাবি, রাখাইনে (রোহিঙ্গাসহ) সব জাতিগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য লড়াই করছে তারা। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউএলএ বা আরাকান আর্মি হলো একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যা আরাকান অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক সব জাতিগোষ্ঠীর জাতীয় পর্যায়ে সমতা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের নিপীড়নকারী শাসকের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে।’

গোষ্ঠীটির ভাষ্যমতে, ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আরাকান আর্মির সমরাভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আরাকানবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও এ অঞ্চলের সব জাতিগোষ্ঠীর মুক্তি অর্জন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের এ প্রচেষ্টা মিয়ানমারের সব জনগোষ্ঠীর মুক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখছে। উপরন্তু মিয়ানমারের নিপীড়িত সমগ্র জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সংগঠনের দৃঢ় ও অবিচল অবস্থান অব্যাহত থাকবে। মিয়ানমারের আমাদের সব জাতির ভাই-বোনদের কাছেও আমরা সত্যিকারের ভাই ও বন্ধু হয়ে থাকব।’

আরাকান আর্মির দাবি, সামরিক সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক উপায়ে বর্তমান অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধানে তারা সব সময়ই প্রস্তুত রয়েছে।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)