1000149855

ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’- বাস্তবায়ন চান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসন ছাড়া সরকারি চাকরির বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা ‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

তারা মনে করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নীতি নির্ধারণ, পদ না থাকলেও পদোন্নতি, বিদেশ সফর, বিশেষ ক্ষমতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশি ভোগ করেন। তাই এ বঞ্চনার অবসান চান তারা।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আয়োজনে গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে এক আলোচনা সভায় এমন মতামত প্রকাশ করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

‘‌জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সিভিল সার্ভিসের মধ্যে একটি ক্যাডার শাসকের ভূমিকায় রয়েছে। তারা গত ১৭ বছরে সমতায়, মর্যাদায়, সম্মানে—সব জায়গায় তারা অন্যদের বঞ্চিত করে বৈষম্য তৈরি করেছে। প্রশাসন ক্যাডারের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আন্তঃক্যাডার বৈষম্যও বাড়িয়েছে।

আলোচনা সভায় বিভিন্ন ক্যাডারের আট হাজারের মতো কর্মকর্তা উপস্থিত হন। সভায় ১৫টির বেশি ক্যাডারের ১৯ জন কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আহ্বায়ক কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পরিষদের সমন্বয়ক ফারহানা আক্তার।

সড়ক ও জনপথ ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রকৌশলী শাহে আরেফিন সভায় বলেন, ‘‌একটি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শত শত অফিসারের পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে। অন্যদিকে আমাদের ক্যাডারের বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিলেও কর্ণপাত করা হচ্ছে না। যেমন হাইকোর্ট ২০১৫ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদটিকে গ্রেড-৩ এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদটিকে গ্রেড-২-তে উন্নীত করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেনি মন্ত্রণালয়। এমন সব অবর্ণনীয় বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।’

২৫টি ক্যাডার বৈষম্যের শিকার বলে উল্লেখ করেন বিসিএস সমবায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। ২৭ বছরের চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার ট্রেনিংগুলো (প্রশিক্ষণ) মন্ত্রণালয়ের অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়ে যায়। সে (ওই কর্মকর্তা) ট্রেনিংয়ের পর আবার চলে যায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যে ট্রেনিং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার জন্য এসেছিল, সেটা গ্রহণ করে সে চলে যায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে।’ এটা বৈষম্য উল্লেখ করে তা দূর করার দাবি জানান তিনি।

শিক্ষা ক্যাডার সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ করেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ক্যাডার সার্ভিসের একটা মর্যাদার অবস্থান আছে। সেই ক্যাডারে শিক্ষা আছে বলেই এখনো মেধাবীরা শিক্ষাতে আসেন এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন এ দেশের সাধারণ জনগণকে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সার্ভিস দেয়ার জন্য।’ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করার প্রস্তাবকে অদূরদর্শিতা বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম।

সিভিল সার্ভিসে একটি ক্যাডার বাকি ক্যাডারগুলোকে বঞ্চিত করছে বলে মনে করেন বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘‌সিভিল সার্ভিসের মধ্যে একটি ক্যাডার শাসকের ভূমিকায় রয়েছে। সমতায়, মর্যাদায়, সম্মানে—সব জায়গায় তারা ২৫ ক্যাডারকে বঞ্চিত করেছে। সেই ক্যাডার গত ১৭ বছরে বৈষম্য তৈরি করেছে। বিপ্লবের পর সেই একটি ক্যাডারের লোকদের প্রশাসক হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে বসানো হয়েছে। বিপ্লবের পর সংস্কারের দায়িত্বও সেই একটি ক্যাডারকে দেয়া হয়েছে। যারা বৈষম্য তৈরি করল, তাদের দিয়েই বৈষম্য নিরসনের দায়িত্ব দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’


বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)