মেয়াদ বাড়ল ছয় সংস্কার কমিশনের
নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথম ধাপে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের সবগুলোরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। কমিশনগুলোর সময় বাড়ানোর কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত বৃহস্পতিবার পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানানো হয়।
২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর ৩ অক্টোবর প্রথম ধাপে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন ও বিচার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল।
বর্তমানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্থার কমিশনের প্রধান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবুল নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। এ ছয় কমিশন ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নতুন যে সময় দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আমাদের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার। তবে আমরা নিজেরাই মূল্যায়ন করে দেখেছি আরো এক সপ্তাহ সময় পাওয়া গেলে কাজটা আরো বেশি সন্তোষজনকভাবে করা সম্ভব হবে। সেই কারণে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম সময়সীমাটা বাড়ানোর জন্য। তবে বাকি সংস্কার কমিশনের বিষয়ে বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘দুদক সংস্কার কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট বলতে যা বোঝায় সেগুলো সরকারের কাছ থেকে আমরা নিইনি। টিআইবির পক্ষ থেকে পুরো সহায়তা দিয়েছি। আমাদের টিআইবি কার্যালয়ে কমিশনের বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
এদিকে গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তাদেরকে প্রতিবেদন দিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//