প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন প্রধান উপদেষ্টার এ প্রেস সচিব।
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসের পরিচালনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, আমরা দেশের অশান্ত সময়টা পার করেছি। এখন দেশ অনেকটাই স্থিতিশীল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। আমলাতন্ত্রেও আমরা স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে এনেছি, যদিও কিছু কিছু জায়গায় এখনো উত্তেজনা চলছে। সব মিলিয়ে দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি একশোর মধ্যে ৯০ ভাগ সফল বলে মনে করি।
অর্থনীতির উন্নতির প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, আপনি যদি রিজার্ভের কথা বলেন এটা কিন্তু দ্রুত বাড়ছে। অর্থনীতির দিকে তাকান, যে খারাপ সময়ের মধ্যে আমরা গিয়েছিলাম, তার উন্নতি ঘটেছে। গত তিন-চার মাসের রপ্তানির দিকে লক্ষ্য করুন, এটা খুব গতিশীল। সেপ্টেম্বরে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ২১ শতাংশ, নভেম্বরে এসে ১৬ শতাংশ রফতানি বেশি হয়েছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের শেষে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা যদি বলি, সেখানে দেখা যাচ্ছে গত বছরের মতোই পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখন।
আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক কি না প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। কারণ, আমরা তো চাই অপরাধ আরো কম হোক।
নির্বাচন ইস্যুতে তিনি জানান, দুটো সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্তটা এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ন্যূনতম একটা সংস্কার করে নির্বাচন দিলে সেটা আগামী ডিসেম্বরে এবং আরো বেশি সংস্কার চাইলে সময়টা আরো ছয় মাস এগোতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, গোটা বিষয়টা নির্ভর করছে সংস্কার নিয়ে সংলাপটা কেমন হবে, আমরা কতটা সংস্কার করতে চাচ্ছি তার ওপর। সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। বিষয়টা এমন না যে, এক-দেড় বছরের মধ্যে আমাদের প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকার এলে তারা এই সংস্কার আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনটা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান কাজ। এই সংস্কারটা আগে করতে হবে। এরই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনীর জন্য কিছু কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে এবং সে কাজটা এগিয়ে নিতে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ঐ ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ আছে, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস চেয়ারম্যান।
সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিভিন্ন ধরনের অবস্থান, অভিযোগ, বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে সংস্কার ইস্যুতে সরকার একটা বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে কি না প্রশ্নে তিনি বিষয়টি একেবারে নাকচ করে দেন।
প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। সবার মতামত এক হবে- এটাও ঠিক না। সবাই সবার মত, চিন্তা-ভাবনাগুলো জানাবেন। জনগণ সেখান থেকে বেছে নেবে কোনটা তাদের জন্য ভালো। এই মতামত আদান-প্রদানের সময় যেকোনো সংঘাত ঘটবে তা আমি মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, বক্তৃতার মাধ্যমে একে অপরকে আক্রমণ সব গণতান্ত্রিক দেশেই হয়।
তিনি বলেন, এটা শুধু আমাদের দেশেই হয় না। পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিতে এই সংস্কৃতি আরো ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্যাম্পেইনের সময় দেখবেন তাদের মধ্যে কী ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য চলে। একজন আরেকজনকে ‘গণশত্রু’ বলে প্রচার করে। আসলে রাজনীতিতে এটা সাধারণ ব্যাপার, বিতর্ক থাকবেই। সবচেয়ে বড় কথা, এই তর্ক-বির্তকে যদি সবাই মিলে অংশ নেয় তবে একটা সুষ্ঠু সমাধানে আসা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের প্রক্লেমেশন বা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ না হওয়া নিয়েও বক্তব্য দেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শুরুতে এই প্রক্লেমেশনে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলা হলেও পরে বলা হয়, সরকারই এই প্রক্লেমেশন ঘোষণা দেবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিল কেন বা এই ইস্যুতে কী ঘটেছিল?
জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিততে যেতে চাই না। তবে একটি ঘোষণাপত্রে দেশের সব রাজনৈতিক দলের মতামতের অংশগ্রহণ থাকুক তা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। সবাই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে একটা ঘোষণাপত্র তৈরি হোক, আর সেখানে ড. ইউনূস অবশ্যই থাকবেন।
সূত্র: বাংলানিউজ
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//