government-logo

যেভাবে আন্ত:দেশীয় বাণিজ্য সহজ করবে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্ত:দেশীয় বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্দ্যেশ্যে উদ্ভাবিত ‘সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম’ এমন একটি ব্যবস্থা যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের কাস্টমস বিভাগ ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত বিভিন্ন সংস্থা বাস্তবায়ন করেছে। এ সিস্টেম ব্যবহার করে একজন আমদানিকারক-রপ্তানিকারক সব রকম সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট সংগ্রহ এবং পণ্যচালান খালাসের জন্য কেবল একটি সিঙ্গেল অনলাইন প্লাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দাখিল করতে পারবেন। দাখিলকৃত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পণ্যচালান দ্রুততম সময়ে খালাস নিতে পারবেন। এই ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত সকল সংস্থার জন্য একটি ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যবাতায়ন (Window) থাকবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তির (TFA) ১০.৪ দফায় সকল সদস্যরাষ্ট্রকে ‘সিঙ্গেল উইন্ডো’ প্রবর্তনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিঙ্গেল উইন্ডো
২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (WTO) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট (TFA) স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির (TFA) ১০.৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে “সকল সদস্যরাষ্ট্র সিঙ্গেল উইন্ডো স্থাপনের প্রচেষ্টা নেবে।” জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্যতম বৃহৎ একটি প্রকল্প হচ্ছে “ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো” (NSW) প্রকল্প। এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যধারা সহজতর হবে, ব্যবসায়ীদের ব্যয় (Cost of Doing Business) হ্রাস পাবে এবং বন্দরে পণ্যচালান খালাসে কম সময় লাগবে। এ প্রেক্ষিতে, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধের উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৭ সালে এ প্রকল্প গৃহীত হয়। 

প্রকল্পের লক্ষ্য/উদ্দেশ্য:

• WTO –TFA Agreement এর আর্টিকেল ১০.৪ বাস্তবায়ন;

• আন্তর্জাতিক পণ্য ছাড়করণে গতিশীলতা আনয়ন করে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ, সময় ও হয়রানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসকরণ;

• পণ্য ছাড়করণের সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় সমন্বয় ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিকরণ;
• নিবন্ধিত ব্যক্তি /সংস্থা এবং সরকারী সংস্থাসমূহকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা সম্পর্কিত অনুমোদন, লাইসেন্স, প্রত্যয়ন এবং শুল্ক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে;

• আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক এবং সরকারের মধ্যেকার সম্পর্ক আরো জোরদার করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা ও দ্বৈত কাজসমূহ দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করে তুলবে এবং প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার সূচনা করা হবে;

• আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আবদেনপত্র, সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিট প্রভৃতি অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ, প্রেরণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হবে;

• অনলাইনের মাধ্যমে সকল প্রকার সেবামূল্য পরিশোধ করা যাবে এবং

• আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে জড়িত বিভিন্ন সরকারী সংস্থা/রেগুলেটরী অথরিটির সাথে Advance Programming Interface (API) এর মাধ্যমে Interconnectivity তৈরি করা হবে।

প্রকল্প সম্পর্কিত তথ্যাদি:

একনেক কর্তৃক প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয় আগস্ট/২০১৭ খ্রিস্টাব্দে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয় এপ্রিল/২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এবং Project Implementation Unit (PIU) গঠন করা হয় জুলাই/২০১৮ খ্রিস্টাব্দে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৬ খ্রি: পর্যন্ত। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ৩৮টি দপ্তরের সাথে MoU স্বাক্ষর করা হয় ০৭ আগস্ট, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে। 

এই প্রকল্পের প্রধান দুটি সিস্টেম  - একটি হলো BSW (Bangldesh Single Window) সফটওয়্যার, অপরটি ARMS (Advance Risk  Management System), যা TF Agreement এর আর্টিকেল ১০.৭ অনুযায়ী বাস্তবায়নযোগ্য। ARMS সিস্টেমটি BSW সফটওয়্যার এর সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে, কোন আবেদনকারী কোন CLP এর জন্য BSW প্লাটফর্মে আবেদন করলে, তা  সাথে সাথে ARMS এর সহায়তায় উক্ত আবেদনকারীর পূর্ববর্তী ট্র্যাক রেকর্ডের ফিডব্যাকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্হার নিকট আবেদনটি ফরওয়ার্ড হবে। ফলে, সংশ্লিষ্ট সংস্হা আবেদনকারীর track record সম্পর্কে অবহিত থাকবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্হাপনার মাধ্যমে CLP ইস্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। 

BSW System
BSW Software এ মোট ৯টি Module আছে। Module সমূহ Live ‍Environment এ রয়েছে। Certificate, License, Permit Issuing Authority (CLPIA) কর্তৃক জারীকৃত ১১৯ টি CLP এর মধ্যে ৮১টি CLP configuration সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, ৮১টি CLP Live এ রয়েছে এবং আমদানি-রপ্তানিকারক ইতোমধ্যে এই স্বয়ংক্রিয় সুবিধা ব্যবহার করতে পারছেন। ০১/০১/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত ৩৩০৯ টি CLP আমদানি-রপ্তানিকারকগণ online এ পেয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে, সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যুকারী ১৯টি সংস্থার মধ্যে ৭টি সংস্থার (DOE, DGDA, EPB, DOEx, BNACWC, BEZA and BEPZA) ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার, ০২/০১/২০২৫ খ্রি: তারিখ হতে Go-Live এর কার্যক্রম ïiæ করা হচ্ছে। অন্যান্য ১২টি সংস্থা আগামী ২৮/০২/২০২৫ খ্রিঃ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গরুপে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম গ্রহন করবে। 

BSW এর সুবিধাসমূহ:
• পণ্যছাড় সহজীকরণের মাধ্যমে ২৪/৭ ভিত্তিতে আমদানি-রপ্তানি সম্পন্নকরণ;

• অনলাইনে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিশন এর আবেদন ও ইস্যু এর কার্যক্রমের গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের সুবিধা;

• সরকারী কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে;

• একটি কমন প্লাটফরমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার প্রতিনিধিদের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে;

• স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় হিউম্যান ইন্টারেকশন কমবে;

• সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে;

• সবচেয়ে কম সময়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি নিশ্চিত হবে;

• আমদানি ও রপ্তানির সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে;

• দেশি-বিদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং

• Ease of Doing Business সূচকে বাংলাদেশের দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হবে।

ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প কার্যকরভাবে ও যথাসময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্টিফিকেট/লাইসেন্স/পারমিট ইস্যুকারী দপ্তর/সংস্থা তথা CLPIA দের মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয়, সহায়তা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)